আজকের সেরা

সদর থানায় ৩৬ ঘণ্টা আটক রেখে ঘুষ গ্রহণ, পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা!

By Daily Satkhira

September 18, 2016

আসাদুজ্জামান: সাতক্ষীরা সদর থানায় টানা ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তদবির তাগাদার পর ঘুষ প্রদান অতঃপর ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা দিয়ে পুলিশের খাঁচা থেকে খুলনার তিন যুবক মুক্তি পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদেরকে গাড়িসহ আটক করেন সাতক্ষীরার কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই এনামুল। আর তাদের মুক্তির নাটকের প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সাতক্ষীরা থানার ঝাড়–দার সাগর। তবে সাতক্ষীরার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভিন জানান, গাঁজা খাওয়ার অপরাধে শনিবার তিন যুবককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় শহরের আমতলা মোড় থেকে খুলনার চার যুবক ইমরুল কবির রাজু, ফারুক হোসেন, সাজিদ হোসেন ও মো. যুবায়েরকে আটক করেন এসআই এনামুল। এর পরপরই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় সাতক্ষীরা সদর থানায়। আত্মীয়তার সুবাদে খুলনার একজন সংবাদকর্মী (নাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম উহ্য রাখা হয়েছে) ঘটনার রাত থেকেই তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন পুলিশের কাছে। কিন্তু এসআই এনামুল তাদের মুক্তির বিনিময়ে দাবি করেন কখনও দেড় লাখ, কখনও এক লাখ। আবার কখনও ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দরদামে মিল না হওয়ায় মুক্তি হচ্ছিল না তাদের। তবে শনিবার সকালে আটক যুবক জুবায়েরকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও তার কাছ থেকে কত টাকা আদায় হয়েছে তা অজানা রয়ে গেছে। ঘটনাবলীর তদবিরকারক খুলনার সেই সংবাদকর্মী জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে তাকে সাতক্ষীরা থানার ঝাড়–দার সাগর ফোন করে জানান একটি নির্দিষ্ট নম্বরে (নম্বর- ০১৯৮৬৬৪৬৮৫৫) বিকাশ করে ৩০ হাজার টাকা পাঠানো হলে রাতেই তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। তিনি জানান রাত্ েবিকাশ করা টাকা তুলে সাগর তা থানা হাজতে আটক ইমরান কবির রাজুর কাছে রেখে দেন। সকালে তা থেকে দুই হাজার টাকা নাশতা বাবদ কেটে নেন সাগর। পরে তিরিশ হাজার টাকা পূরণ করতে আরও দুই হাজার টাকা বিকাশ করতে হয় সাগরের কাছে। তবে সাগর বলেন, ‘তিরিশ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে এসেছিল আমার নম্বরে নয়, আমাদের এক ছোট ভাইয়ের নম্বরে এসেছিল। তবে সে টাকা তো কাটিয়া ফাঁড়ির এনামুল স্যার নিয়েছেন বিষয়টি মিটমাট করতে’। ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আজাদ বলেন ‘চারজনকে আটক করেন এসআই এনামুল। পরে থানা পুলিশ তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাদের জরিমানা করেন’। অপরদিকে, এসআই এনামুল টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, টাকা নিলে তো তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে নেওয়া হতো না। টাকা নেওয়ার বিষয়টি অপপ্রচার। আপনি ওসি সাহেবের সাথে কথা বললে বুঝতে পারবেন। এর আগে শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরার একজন সাংবাদিককে সদর থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্যা জানান, আটক যুবকদেরকে চালান দেয়া হচ্ছে। আটককৃতদের নামের লিষ্ট ইতিমধ্যে সব জায়গায় চলে গেছে। এখন আর তাদের ছাড়া সম্ভব নয়। খুলনার ওই সংবাদকর্মী আরও জানান, টাকা পেয়েও পুলিশ তাদের ছাড়েনি। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে এমন কথা বলে তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতে। আগেই তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় নামমাত্র জরিমানা করে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা পারভিন ভ্রাম্যমাণ  আদালতে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে তিন যুবক  শনিবার বিকালে ফিরে যান খুলনায়। অপরদিকে তাদের ব্যবহৃত গাড়িটি জিম্মায় নেন তদবিরকারক খুলনার সংবাদকর্মী।