নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলা আাইনজীবী সমিতির ১১ সদস্যের কার্যকরি কমিটির আট সদস্য পদত্যাগ করায় ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার কুণ্ডু তপন কুমার ওই কমিটি ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে অ্যাড. আবুল হোসেন – সবুজ কমিটি গঠণ ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অ্যাড. এসএম হায়দারকে দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ওই কমিটি ও নির্বাচন কমিশনারের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. আমিনুর রহমান চঞ্চলের দায়েরকৃত মামলা ও নিষেধাজ্ঞার আবেদন শুনানী শেষে বিচারক সাতজন বিবাদীকে দু’ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাণোর নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে আইনজীবীদের দু’গ্র“পের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার সকাল থেকে আইনজীবী সমিতির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
আইনজীবী সমিতির কর্মী তুরাব হোসেনকে মারপিটের অভিযোগে রবিবার ও সোমবার সমিতির বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধ থাকায় উকালতনামা, বেলবণ্ড, হাজিরাসহ কোন কাগজপত্র কিনতে পারেনি বিচারপ্রার্থীরা। অপরদিকে সোমবার দুপুরে আইনজীবী সমিতির একটি ভবনে আবুল হোসেন – সবুজ গ্র“পের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর দু’টো থেকে অ্যাড. কুণ্ডু তপন কমিশনের মনোনয়ন পত্র বিক্রি শুরু করে। সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে,
১১ সদস্য বিশিষ্ঠ সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরি কমিটির আটজন সদস্য গত ২৭ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. কুণ্ডু তপন কুমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। গঠণতন্ত্র অনুযায়ি কার্যকরি কমিটির দুই তৃতীয়াংশ পদত্যাগ করায় ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় কুণ্ডু তপনকে মোবাইল ফোনে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আব্দুল লতিফ হুমকি দেন বলে অভিযোগ। ৩১ জানুয়ারি বিলুপ্ত কমিটি সাধারণ সভা আহবান করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম হায়দার আলীকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। এ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনারসহ সাতজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে যুগ্ম জজ প্রথম আদালতে মামলা করে তাদের কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা চান মামলার বাদি অ্যাড. আমিনুর রহমান চঞ্চল। বিচারক রাখিবুল ইসলাম সোমবার শুনানী শেষে বিবাদী অ্যাড. আবুল হোসেন(২), অ্যাড. আ.ক.ম রেজোয়ান উল্লাহ সবুজ, সম্প্রতি গঠণ করার নির্বৃাচন কমিশনার অ্যাড. এসএম হায়দার, অ্যাড. মোঃ শফিকুল ইসলাম খোকন, অ্যাড. শম্ভুনাথ সিংহ, অ্যাড. খায়রুল বদিউজ্জামান বাচ্চু ও অ্যাড,
শাহানাজ পারভিন মিলিকে নোটিশ প্রাপ্তির দু’দিনের মধ্যে কারণ দর্শাণোর নির্দেশ দেন। এ ছাড়া সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির একটি কক্ষে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন- সবুজ গ্র“পের নেতৃুত্বে সাধারণ সভা আহবান করা হয়। সেখানে ২০০৬ সালে পোষ্ট অফিস থেকে উত্তোলন করা ছয় লাখসহ ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯৯ টাকা হিসাব না দিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে তৎকালিন সভাপতি অ্যাড. এম শাহ আলমকে বারের সদস্যপদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একইভাবে আগামি সাত দিনেরজ মধ্যে আত্মসাৎকৃত টাকা বারের কোষাগারে জমা না দিলে তার সদস্যপদ স্থায়ীভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রেজুলেশন করে তা ঢাকা বার কাউন্সিলে পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার মুকুন্দ মধুসুধনপুর গ্রামের আবু তালেব সরদার, তালার ইসলমাকাটির অরুপ মণ্ডল, সদরের কাশেমপুরের শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আইনজীবী সমিতির দু’ গ্রপের বিরোধকে কেন্দ্র করে সমিতির বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত তুরাব আলীকে বৃহষ্পতিবার দুপুরে মারপিট করেন কয়েকজন আইনজীবী। এ ঘটনায় ক্ষব্ধ সমিতির ১৯ জন কর্মচারি বিক্রয়কেন্দ্রসহ কয়েকটি কক্ষে তালা লাগিয়ে চাবি সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন(২) এর কাছে দিয়ে চলে যান। রবিবার তারা মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে কাজে না আসায় গত দু’ দিনে উকালতনামা, বেলবণ্ড, হাজিরাসহ কোন কাগজপত্র কিনতে পারেনি। ফলে বিচারপ্রার্থীরা নতুন মামলা ফাইলিং, জামিন আবেদন, হাজিরা ও বেলবণ্ড কিনতে পারেননি। এ অবস্থায় বিচারপ্রার্থীরা শুধুমাত্র হয়রানি হয়েছেন তা নয়, আইনজীবী সমিতির কাগজপত্র বিক্রি না হওয়ায় দু’দিনে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্টাম্প ভেণ্ডররা সমিতির হাজিরার কাগজ চড়া দামে বিক্রি করেছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার সকাল থেকে আদালত চত্বরে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন ছিল বলে জানান কয়েকজন আইনজীবী।#