শ্যামনগর প্রতিনিধি : কৃষির আধুনিক মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে সুনীল কুমার সরকার। নিচের পানিতে মাছ চাষের পাশাপাশি ধান চাষ এবং উপরে রয়েছে মশলা জাতীয় ফসল সহ নানা ধরনের ১২ মাসী সবজি চাষ। এর পাশাপাশি হাঁস ও গরু পালন তো আছেই। এভাবে সারা বছর ধরে বহুমুখী চাষাবাদের ফলে অত্র এলাকায় কৃষির আধুনিক মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে সুনীল কুমার সরকার। নিজের মাত্র এক বিঘা জমি থাকা স্বত্ত্বেও পাশে অন্যের কয়েক বিঘা জমি লীজ নিয়ে তাতে সারা বছর ধরে চাষাবাদ করে সফলতার দেখা পেয়েছেন শ্যামনগরের কাশিমাড়ী ইউনিয়ের খুটিকাটা গ্রামের চাষী সুনীল কুমার সরকার। চাষাবাদে সুনীল কুমার সরকার কে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী সন্ধ্যা রানী সরকার ও একমাত্র ছেলে নীলকমল সরকার।
তার ক্ষেতে বেগুন, টমেটো, কুমড়া, ঝাল, পেপে, লাল শাক, পুঁইশাক, ডাটা শাক, শিম, বরবটি, ঢেঁড়স, মুলা, আলু, বাধাকপি, ধনে পাতা, নেপিয়ার ঘাস, ধান, লাউ, পেঁয়াজ, রসুন, ওল কপি, ফুলকপি, কলা চাষ, হাঁস ও গরু পালন, ক্যাপসিকাম, তরমুজ ও গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ সহ সুনীল কুমার সরকার বছরের ১২ মাসই ব্যস্ত থাকেন চাষাবাদের উপর।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সমন্বিত ভাবে মডেল আকারে নানা ধরনের সবজি, মশলা, মাছ, গরু ও হাঁস চাষ করে সফলতার দেখা পেয়েছেন কৃষক সুনীল কুমার সরকার। তার এই মডেল কৃষি খামারে তিনি কখনও রাসায়নিক সার এবং কিটনাশক ব্যবহার করেননি। তিনি নিজ বাড়িতে তৈরিকৃত ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেন এবং নিজের খেতের জৈব সারের চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশের কৃষকের মাঝে সরবরাহ করেন। কিটনাশকের পরিবর্তে কৃষক সুনীল কুমার সরকার নিম পাতার রস স্প্রে করেন তার চাষাবাদে। মুলত জৈব সার এবং জৈবনাশক নিম পাতার রস ব্যবহারের ফলে তার এই সফলতা দেখা পেয়েছেন। আর জৈবসার ব্যবহারের ফলে তার উৎপাদিত সবজির আলাদা স্বাদ পাওয়া যায় বলে চাষী সুনীল কুমার সরকার জানান।
কৃষক সুনীল কুমার সরকার বলেন, প্রথম দিকে নিজের মাত্র এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু করি। এই এক বিঘা জমির পতিত বেড়িতেও সবজি চাষ করি। প্রথমেই আমি সহ আমার স্ত্রী ও ছেলের পরিশ্রমের ফলে সবজি চাষে সফলতার মুখ দেখি। এর পরই আমি চাষাবাদের জায়গা সম্প্রসারণ করি। আমার জমির আশেপাশে অন্যের পতিত জমি লীজ নিয়ে এখন তাতে মাছ ও হাঁস চাষ সহ নানা জাতের সবজি ও মশলা চাষের মাধ্যমে মডেল আকৃতির চাষাবাদে রূপান্তর করেছি। কৃষি অফিসার সহ এলাকাবাসী আমার কৃষি ক্ষেতকে মডেল কৃষি খামারের নাম দিয়েছে। চাষাবাদের শুরুতে উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর শ্যামনগর এর পরামর্শ ও সহযোগিতায় মাছের ঘেরের পতিত বেড়িতে নানা জাতের সবজি চাষ করি এবং নিচের পানিতে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস চাষ করে সফলতা পাই। কোন প্রকার বালাইনাশক/কিটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে নিজ গৃহের গরুর গোবর দিয়ে তৈরিকরা জৈব সার এবং নিমের পাতার রস ব্যবহারে চাষাবাদে যেমনি সফলতা পেয়েছি, সেই সাথে আমার ক্ষেতে চাষ করা সবজি খেতেও সুস্বাদু। যদি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা আরও পাই তাহলে আগামীতে আরও জমিতে অন্যান্য জাতের সবজি সহ নানা প্রকারের চাষাবাদ করে পরিপূর্ণ ভাবে মডেল কৃষি খামার তৈরি করতে পারব।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার (গোবিন্দপুর ব্লক) শামসুর রহমান জানান, অত্র এলাকার আবহাওয়া কৃষি কাজের জন্য উপযোগী। লবনাক্ত এলাকা হওয়া স্বত্ত্বেও মাছ চাষের পাশাপাশি এখানে কৃষি কাজেও সফলতা আনা সম্ভব। আর মডেল আকারে কৃষি কাজ করে সফলতা পেয়েছে কৃষক সুনীল কুমার সরকার। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সর্বদা কৃষকের পাশে আছে। অত্র এলাকায় এসব সবজি চাষাবাদের ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তা এলাকার বাহিরে দেশের বিভিন্ন শহরে রপ্তানি করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা মত চাষী সুনীল কুমার সরকার তার কৃষি কাজে কোন প্রকার বালাইনাশক /কিটনাশক / রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে নিজ গৃহে তৈরি করা জৈব/গোবর সার এবং নিম পাতার রস স্প্রে করে ফসল উৎপাদন করেন। তার এই উৎপাদিত ফসলের স্বাদ অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি। সুনীল কুমার সরকারের এক ইঞ্চি জমিও পতিত নেই। চাষী সুনীল কুমার সরকার জৈব নাশক নিম পাতার রস স্প্রে এবং নিজবাড়ীতে তৈরিকৃত ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে যে সফলতার মুখ দেখেছেন তা দেখে অত্র এলাকার অন্যান্য চাষীরাও আগ্রহ প্রকাশ করে জৈবিক উপায়ে চাষাবাদ শুরু করেছেন। অত্র এলাকার কৃষকদের পাশে আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সর্বদা আছে।