তালা

তালার শামসুন নাহার খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা

By daily satkhira

February 10, 2022

তালা প্রতিনিধি ::

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কর্মসুচীর আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে খুলনা বিভাগে প্রথম হয়েছেন তালার কৃতি সন্তান শামসুন নাহার। বুধবার খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁকে এ অর্জনের জন্য সার্টিফিকেট,

ক্রেষ্ট,উত্তরীয়,নগদ পঁচিশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী একজন শিশুকন্যা থেকে সফল নারী হয়ে ওঠা প্রফেসর শামসুন নাহার তালা সদর ইউনিয়নের জাতপুর গ্রামের মৃতঃ সামছুর রহমান মোড়লের কন্যা। অবিবাহিত এ নারী খুলনা বিএল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

তালা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, তালার কৃতি সন্তান শামসুন নাহার খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন যেটি তালাবাসীর জন্য বিশেষ করে নারীদের জন্য দারুন এক অনুপ্ররণাদায়ী সংবাদ। এজন্য তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। অধ্যক্ষের পদ থেকে কর্মজীবন শেষ করলেও এখনো তিনি নারীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন, জেলা, বিভাগের শ্রেষ্ঠত্বের পর এবার তিনি লড়বেন জাতীয় পর্যায়ে ।

এ বিষয়ে শামসুন নাহার বলেন, তৎকালীনর ৫০ ও ৬০ দশকের সময়ে গ্রামীণ অর্থনীতি ছিল ভঙ্গুর, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ছিল নাজুক। ২/৪ টি পরিবার ব্যতীত গ্রামের প্রায় সকলের আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত দূর্বল।

গ্রামে কোন বিদ্যুৎ ছিল না, যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অনুন্নত। মানুষের চিন্তা-ভাবনা ছিল অনগ্রসর। প্রচলিত ছিল বাল্য বিবাহ, পর্দা প্রথা ছিল সক্রিয়। নারীদের প্রতি গ্রামীণ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল রক্ষণশীল। ঐ সময়ে মেয়েদের লেখাপড়ার তেমন পরিবেশ ছিল না। গ্রামের ২/৪ টি পরিবারের মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ খুবই কম ছিল। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য ছিল প্রকট। মেয়েরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও মতামত প্রকাশ করতে পারতো না। সামাজিক রীতিনীতি ও অনুশাসন ছিল কঠোর। সমাজে নানা ধরণের অন্ধ বিশ^াস ও কুসংস্কার বিরাজ করতো। তখন তাদের যৌথ পরিবার ছিল কৃষিভিত্তিক ও বেশ সমৃদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, দাদা,বাবা,চাচাসহ সকলকে নিয়ে ছিল তাদের পরিবার। বাবার আর্থিক অবস্থা ছিল দূর্বল। ৬ বোন ও ৩ ভাই মিলে মোট ৯ ভাই-বোনেরম ধ্যে তার অবস্থান ৪র্থ। অল্প বয়সে দেখা তার বড় বোনের প্রতি সংঘটিত অবিচার, গ্রামের অন্যান্য নারী ও মেয়েদের প্রতি সংঘটিত অনায্যতা ও বৈষম্য, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, বাবার আর্থিক দূর্বলতার কারণে তাদের প্রতি অন্যদের মনোভাব ও আচরণ ইত্যাদি ঘটনা প্রবাহ তাকে প্রচন্ডভাবে আহত ও সর্বদা তাড়িত করে। যা ঐ সময়ের সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তাকে লেখাপড়া করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করে। শুরু হয় নিজের মধ্যে এক ধরনের নীরব লড়াই এবং প্রকাশ্যে লেখাপড়া করার জন্য জেদ। এইভাবে নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে তিনি লেখাপড়া শেষ করে ১৯৮১ সালে তালা কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি খুলনা বিএল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এদিকে তিনি শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে খুলনা বিভাগে প্রথম হওয়ায় তিনি অভিভূত এবং সংশ্লিষ্টদের কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেন।