দেবহাটা

নীতিমালা লংঘন করে সেকেন্দ্রা মাঠে ফসলি জমিতে ইটভাটা নিমার্ণের অভিযোগ

By Daily Satkhira

June 07, 2017

আসাদুজ্জামান : দেবহাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা লংঘন করে ও প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়াই দেবহাটার উত্তর পারুলিয়া গ্রামের সেকেন্দ্রা মাঠে বসতিসংলগ্ন ফসলি জমিতে জোরপূর্বক ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাটা মালিক মুছা স্থানীয় মাদকসেবীদের টাকা দিয়ে তাদের দ্বারা জমির মালিক ও বর্গাচাষিদের হুমকি দিচ্ছেন। একই সাথে ভাটার বিরোধীতাকারিদের মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। গ্রামবাসি পরিবেশের ক্ষতি করে ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মধ্যম একসরা গ্রামের দ্বীন আলী গাজির ছেলে শহরের ইটাগাছা কুমোরপাড়া বউবাজার এলাকায় বসবাসকারি নব্য কোটিপতি মোশারফ হোসেন ওরফে মুছা দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া মৌজার সেকেন্দ্রা মাঠে ৬০ বিঘা ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা অমান্য করে ও প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়াই ইতিমধ্যে তিনি সেখানে ভাটা নিমার্ণের কার্যক্রম শুরু করেছেন। উচ্চমূল্যে হারির টাকা দিয়ে জমির মালিকদের প্রলুব্ধ করে তিনি ডিড নেয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন মাদকসেবি যুবকদের টাকা দিয়ে তিনি ভাটা নির্মাণের পক্ষে কাজ করাচ্ছেন। মুছার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা ডিডে স্বাক্ষর করার জন্য জমির মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। একই সাথে তারা বর্গাচাষিদের জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য হমকি দিচ্ছে। জমির ডিড না দিলে পুলিশ দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এলাকাবাসি অভিযোগ করে বলেন, সেকেন্দ্রা মাঠে ইটভাটা নির্মাণ করা হলে এই এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যায় দেখা দেবে। এই এলাকায় আনসার আলি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, কুলিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দক্ষিণ কুলিয়া এবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং কুলিয়া এলাহী বক্স দাখিল মাদ্রাসা, কুলিয়া জামে মসজিদসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভাটার কালো ধোয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একই সাথে নষ্ট হবে এই এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল। এখানকার প্রতিটি জমিতে বছরে কমপক্ষে চারটি করে ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এই ফসলি জমিতে ইটভাটা হলে তার ক্ষতিকর প্রভাবে সর্বশান্ত হবে এখানকার দীনমজুর, দরিদ্র কৃষক ও বর্গাচাষিরা। বসতবাড়ি ছেড়ে এলাকা ত্যাগ করতে হবে শতাধিক পরিবারের। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ হবে এলাকার প্রাণবৈচিত্র। বিপন্ন হবে মানুষের স্বাস্থ্য। জমির মালিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা ভাটা করতে জমি দেব না। কিন্তু ভাটার মালিক মুছা বিভিন্ন লোক দিয়ে আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। সে এলাকার কিছু মাদকসেবীদের টাকা দিয়ে হাত করেছে। তারা জমির মালিক ও বর্গাচাষিদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছে। ফলে গ্রামের অনেকে ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের ভয়ে ইতিমধ্যে কয়েকজন জমির মালিক ভাটার পক্ষে ডিড দিয়েছেন। জমির মালিক রোজিয়া বেগম বলেন, এই মাঠে আমার এক বিঘা তের কাঠা জমি রয়েছে। সেখানে সোনার ফসল ফলে। ধান, আলু, পটল ও সরিসা চাষ করি। এই জমি থেকে বছরে এক লাখ টাকার ফসল পাই। এক মাস আগে ২৫/৩০ টাকা কেজি দরে পটল বিক্রি করেছি। এই জমির আয় থেকে সংসারের ১৩/১৪ জন লোাকের পেট চলে। আমার জমিতে আমি ধান চাষ করে খাবো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জমিতে ভাটা করতে দিয়ে আমি মরবো না খেয়ে? প্রাণ দিবো তাও আমার জমিতে ভাটা করতে দেবনা। বর্গাচাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের প্রধান ফসল সবজি। এখানে জমিতে ধানের সাথে ব্যাপক ভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়ে থাকে। এখানকার ধনি-গরিব বেশীরভাগ মানুষ সবজি চাষের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ধনিক শ্রেণির একটি কুচক্রি মহল এই জমিতে ইটভাটা করার চেষ্টা করছে। জমির মালিক সাহেব আলী বলেন, ভাটার কালো ধোয়ায় এখানকার জমিতে কোন ফসল হবে না। গাছে আম হবে না। চারিপাশে গ্রাম। ভাটার কালো ধোয়ায় পরিবেশ নষ্ট হবে। এদিকে পারুলিয়া গ্রামের সেকেন্দ্রা মাঠে ইটভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসি বুধবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ভাটা মালিক মোশারফ হোসেন মুছা জানান, জেলা প্রশাসক যদি তাকে নিষেধ করেন তাহলে তিনি সেখানে আর কোন ভাটা করবেননা। জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো: মহিউদ্দিন বলেন, পারুলিয়ার সেকেন্দ্রা এলাকায় ইটভাটা নির্মানের জন্য কেউ তার কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। পরিবেশের ক্ষতি করে জনবসতি এলাকায় ফসলি জমিতে কোন ভাটা নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। অভিযোগ পেলে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।