নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা গ্রামে ছয় বছরের শিশু আলিফ হোসেন ফারহানকে নির্যাতনকারী তার মামী রানী বেগম ও ছোট মামা আশিকুর রহমানকে সোমবার রাতে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে তারা সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে এ জবানবন্দি দেন। গ্রেপ্তারকৃত রানী বেগম (২২) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা গ্রামের আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী ও আশিকুর রহমান চরবালিথা গ্রামের হাচিম সরদারের ছেলে। এদিকে শিশু আলিফ হোসেন ফারহানের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তার দু’ চোখে অস্ত্রপচার করা হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়ার মঈনুদ্দিন সরদার জানান, তিনি ঢাকার হেমায়তপুরে কীটনাশক প্রস্তুককারি সংস্থা এগ্রোমিন লিভার কোম্পানীতে গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করতেন। ঢাকায় থাকার সুবাদে তার স্ত্রী শারিমন একমাত্র সন্তান আলিফকে নিয়ে বাপের বাড়ি দেবহাটা উপজেলার চরবালিথায় থাকতো। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে মায়ের সঙ্গে গণ্ডগোল করে মারা যায় শারমিন। এরপর থেকে আলিফ তার নানীর কাছে থাকতো। বর্তমানে আলিফ চরবালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতো। প্রায় ছয় মাস আগে তার চাকুরি চলে গেলে সাতক্ষীরায় ফিরে আসেন। দু’ মাস আগে তিনি কলারোয়া উপজেলার গদখালি গ্রামে বিয়ে করে সেখানেই অবস্থান করেন। আলিফ তার মামী রানী বেগমকে মা বলে ডাকতো। মঈনুদ্দিন সরদার জানান, সোমবার দুপুর একটার দিকে শিশু আলিফকে রক্তাক্ত অবস্থায় মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধের পাশে একটি পানি বিহীন পুকুরে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তাকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আলিফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই চোখ খুচিয়ে – খুচিয়ে মারাত্মক ভাবে রক্তাক্ত জখম করে এবং তার চোখের আশে পাশে,মুখমন্ডলে, নাকে মুখে,ঠোটে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে বলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ পারভিন আক্তার তাকে জানান। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আলিফকে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে আলিফের চক্ষু অপারেশন করা হয়। তবে ছোট মামা আশিকুর ও বড় মামী রানী বেগমের পরকীয়া দেখে ফেলায় আলিফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করা হয় বলে পরে তিনি জানতে পেরেছেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মোঃ তুহিনুজ্জামান জানান, সদর থানার পুলিশ ও দেবহাটা থানার পুলিশ যৌথভাবে রানী বেগমকে সোমবার রাত ৮টার দিকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে দেবর আশিকুরের সঙ্গে রানী বেগমের পরকীয়ার ঘটনা দেখে ফেলায় আলিফকে ছুরি দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে জখম করা হয়েছে জানতে পেরে সোমবার রাত ১২টার দিকে আশিকুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশুটির বাবা মঈনুদ্দিন সরদার বাদি হয়ে মঙ্গলবার রানী বেগম ও আশিকুরের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা (৪নং) দায়ের করেছেন। বিকেলে রানী ও আশিকুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে আলিফকে হামলার জন্য একজন অপরজনকে দায়ী করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।