সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার আ’লীগ নেতা রায়হান হত্যা: চার্জশীটভুক্ত ৩৪জনকে অব্যহতি

By daily satkhira

April 18, 2022

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক আবু রায়হানকে জবাই করে হত্যা মামলা চলছে ধীর গতিতে। অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ৭৭ জন আসামীর মধ্যে ৩৪ জনকে অভিযোগগঠণকালে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। ১০ মাস পর সাক্ষী গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ন্যয় বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় ভুগছেন নিহতের পরিবারের স্বজনরা। নিহত আবু রায়হান(৪৬) দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের রকিব গাজীর ছেলে।

২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর বৃহষ্পতিবার রাত ৮টার দিকে পারুলিয়া বাসস্টাণ্ডে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মোমেনা বস্ত্রালয়ের সামনে কয়েক’শ লোকের উপস্থিতিতে জামায়াত, শিবির ও ব্নিপির নেতা কর্মীরা ফিল্মি স্টাইলে রায়হানকে নৃশংসভাবে কুপিটয়ে ও জবাই করে হত্যা করে।

সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, রায়হান হত্যা মামলায় পারুলিয়া গ্রামের সামছুল গাজীর ছেলে ইব্রাহীম হোসেন ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ও কোড়া গ্রামের আকবর আলী সরদারের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন বিচারিক হাকিম গোলাম নবীর কাছে রায়হান হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত থাকিার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। নয় জন তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিবর্তণ হয়ে ১০ম তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক উজ্জল কুমার দত্ত ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে নয়জন পলাতক রয়েছে। মামলাটি বিচারের জন্য সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. অজয় কুমার সরকার ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. ইউনুছ আলী জানান, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে মামলার গতি মন্থর হয়ে যায়। গত বছরের ১৪ সেপ্ম্বের অভিযোগ গঠণের জন্য দিন ধার্য করা হয়। মামলা থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য ৫৭ জন আবেদন করেন। ধার্যদিনে উভয়পক্ষের শুনানী শেষে সকল আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠণ করা হবে বলে তারা জানতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কজ লিস্টে তারিখ না পড়ায় ও অভিযোগগঠণ সম্পর্কে জানতে না পারায় তারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। মামলার কার্যক্রমে যথাযথ অগ্রগতি না হওয়ায় জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০ মার্চ মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বদলী হয়ে আসার কয়েকদিন পর তারা জানতে পারেন যে ৩৪ জন আসামীকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগগঠণকালে অব্যহতি পাওয়া আসামীরা হলেন, দিদার আলী সরদারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন ও ফারুক হোসেন, ইসমাইল গাজীর ছেলে ফারুক হোসেন, মাসুম বিল্লাহ, আরিজুল ইসলাম, আমীর আলীর ছেলে রওশান আলী, ইবাদুল হক ওরফে ইবাদুর রহমান, সরাফরাজ হোসেন সরদার ওরফে রাজ, আমজাদ বিশ্বাস, বাবর আলী, খায়রুল বাসার, আনারুল হোসেন, হাসান আলী, মনিরুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান গাজী ওরফে মুকুল, আব্দুল করিম সরদারের ছেলে ফারুক সরদার, আবছার আলী, হায়াত আলী, হায়দার আলী, আব্দুল্লাহ সরদারের ছেলে ওমর ফারুক, মাওলানা রুহুল আমিন সরদার, আবু হুরাইরা মোল্লা, মাদার মোল্লা ওরফে ব্যাং সরদারের ছেলে ফারুখ হোসেন, সাইফুল্লাহ, নুর মোহাম্মদ সরদার, রেজাউল গাজী, নজরুল ইসলাম ওরফে নজু, খায়রুল গাজী, আবু তালেব বুলবুল, শেখ বাহাদুরের ছেলে শেখ রওশান, সাহাজুল সরদার, ইমাদুল সরদার ও কামরুল ইসলাম। অব্যহতির আদেশে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ শরিফুল ইসলাম উল্লেখ করেন যে, ২৮ জনের এজাহারে নাম নেই বা সন্দেহ করা হয়নি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনিদ্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। আসামীদের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠণ করার মত কোন উপাদান পরিলক্ষিত হয় নাই। কাজেই সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করিলাম। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৬৫(সি) ধারায় দরখাস্ত মঞ্জুর করা হলো। তাদেরকে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হলো। ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠণ করা হলো। অভিযোগ গঠণ কালে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অ্যাড. মিজানুর রহমান(চালতেতলা)। জানতে চাইলে নিহত আবু রায়হানের স্ত্রী শাহীনা খাতুন বলেন, একটি স্পর্শকাতর হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠণে ৩৪ জনকে অব্যহতি দেওয়ার ১০ মাস পর সাক্ষীর জন্য দিন পড়েছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। তার স্বামী আবু রায়হানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করার পর জবাই করে হত্যা মামলায় এ অবস্থা হলে সাধারণ মানুষের জন্য বিচার কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে? সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ -২য় আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, শুধু এ মামলা নয়, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ম আদালতে থেকে সম্প্রতি স্থানান্তর হওয়া ১৭০টি মামলার কার্যক্রম যাতে দ্রুত চলে সেজন্য রাষ্ট্রপক্ষ তৎপর থাকবে। ৩৪ জনকে অব্যহতি দেওয়ার ব্যাপারে কোন আইনগত দিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।#