নিজস্ব প্রতিনিধি : তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নোটিশ পেয়েও বরিবার ঘের ছেড়ে চলে যাননি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার চুয়াডাঙা গ্রামের মোস্তাক আহম্মেদ। উপরন্তু রবিবার পুলিশের একটি বিশাল টিম জবরদখলকারি মোস্তাক আহম্মেদ এর পক্ষ নিয়ে তালা উপজেলা খরাইল, বারাত, মীর্জাপুর, ভবানীপুর এলাকায় টহল দিয়েছে।
মোস্তাক আহম্মেদ এর সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা জমির মালিকদের হুমকি দিয়ে বলেছে“ এক সপ্তাহ আর কখনো পুরবে না। জমি ফিরিয়ে নিতে এলে রক্তের হোলি খেলা হবে। এদিকে চুক্তিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নোটিশ অমান্য করে ঘেরের জমি ছেড়ে না দেওয়ায় কেশবপুর উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোস্তাক আহম্মেদকে বুধবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে জমির মালিক ও জনপ্রতিনিধিরা। ব্যত্তয় ঘটলে বৃহষ্পতিবার স্থানীয় সাংসদ, তেতুলিয়া, কুমিরা ও ইসলামকাটির তিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জমির মালিকদের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে। কুমিরা ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক নূরু সরদার রবিবার বিকেলে তালা উপজেলার মীর্জাপুর ঘোষপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপুজা মণ্ডপ চত্বরে অনুষ্ঠিত এক মত বিনিময় সভায় বলেন, এক সময় কপোতাক্ষ নদ ছিল তালাবাসীর অভিশাপ।
বর্ষার পানি সরতে না পেরে নদের দু’তীর উপচে বিস্তীর্ন অঞ্চল প্লাবিত হতো। বছরের ছয় মাসেরও বেশি সময় জলাবদ্ধ থাকায় এলাকায় ফসল হতো না।
বাধ্য হয়ে মীর্জাপুর, ভবানীপুর, বারাত, খরাইল এলাকার কৃষকরা তাদের জমি মাছ চাষের জন্য লীজ দিতো। সর্বপরি কয়েক বছর আগে কেশবপুরের চুয়াডাঙা গ্রামের মোস্তাক আহম্মেদ কৌশলে তাদের এলাকার কয়েকজন হিন্দু জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি লীজ নেয়। যারা নিজেরা ঘের করতো তাদেরকে ভয় দেখিয়ে জমি লীজ নেওয়ার চেষ্টা করেন মোস্তাক। তাতেও লাভ না হওয়ায় মোস্তাক ভবানীপুর, খরাইল, মীর্জাপুর, বারাতসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে মারপিট করে পুলিশে প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেষ্টায় কপোতাক্ষ খননের ফলে এখন তালা উপজেলা জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত। মোস্তাক মাছ চাষের নামে ঘেরের মাটি অঙ্গার বানিয়ে ফেলেছে। ২৫০ বিঘা ও ১১০০ বিঘা ঘেরের মাঝখানের রাস্তায় মানুষ তো নয়, গরু ছাগল ও চলতে পারে না। এটা আর সহ্য করা হবে না। গত বছরের ২৬ অক্টোবর খরাইলের প্রহ্লাদ মণ্ডলকে তার ঘেরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে নৌকায় বেঁধে দীর্ঘপথ নির্যাতন করে মোহনা বাজারে নিয়ে তাকে চোর ও চাঁদাবাজ আখ্যা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পাটকেলঘাটার ইন্দ্রজিৎ সাধুকে ম্যানেজ করে প্রহ্লাদকে দিয়ে মামলা তুলে নেয় মোস্তাক। এর কয়েকদিন পর মোস্তাক তার ঘেরে ৫০০ মন মাছ লুট ও ২১ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে প্রহ্লাদের নামে মামলা করে। যা আজো চলমান। মোস্তাক বাহিনীর হাতে এলাকার কমপক্ষে ২৫ জন সাধারণ কৃষক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মীর্জাপুরের আশীষ ঘোষ, চিত্তরঞ্জন মণ্ডল, খরাইলের প্রহ্লাদ মণ্ডল বলেন, মোস্তাক একজন সন্ত্রাসী ও বিএনপি নেতা হয়েও গায়ের জোরে এ এলাকায় ঘের করতে চায়। এজন্য একশ্রেণীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সে কিনে ফেলেছে। ম্যানেজ করেছে পুলিশকে। ফলে হারির মেয়াদ গত ৩০ চৈত্র পার হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাত দিনের নোটিশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে মোস্তাক। কেশবপুর থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে তালার সাধারণ মানুষকে হুমকি দিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে জীবন দিয়েও মোস্তাক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রতিহত করা হবে। ঘোষপাড়া দুর্গা মন্দির থেকে জমির মালিক ও সাধারণ কৃষকরা বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মীর্জাপুর শ্মশানে চলে আসেন। সেখানে উপস্থিত হন তালা- কলারোয়ার সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক মহিবুল্লহ মোড়ল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, রফিকুল ইসলাম, হিরন্ময় মণ্ডল, নির্মল মণ্ডলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা , কর্মী ও সমর্থকরা। বক্তব্য রাখার একপর্যায়ে সাংসদ মোস্তফ$া লুৎফুল্লাহ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে মোস্তাক আহম্মেদ রবিবারের মধ্যে ঘের ছাড়েনি। তাই সবদিক ভেবে ইউপি সদস্য মাসুদ, খায়রুল ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ারকে নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করে যারা জমি ফিরিয়ে নিতে চান এমন কৃষকদের তালিকা তৈরি করতে হবে। বুধবারের মধ্যে মোস্তাক আহম্মেদ তার ঘের থেকে মাছ ধরে নিয়ে জমি ছেড়ে না দিলে তিনিসহ কুমিরা, ইসলামকাটি ও তেঁতুলিয়ার তিন চেয়ারম্যানকে নিয়ে জনগণকে সংগঠিত করে বৃহষ্পতিবার সকালে সকল বাধা অপসারন করে কৃষকদের চাষের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে বুধবারের মধ্যে তিনি এলাকার কোন কৃষককে মোস্তাকের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহবান জানান।#