জাতীয়

বিক্ষোভের মুখে সেই মা-ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

By Daily Satkhira

April 25, 2022

দেশের খবর: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও থানার সামনে বিক্ষোভের মুখে মুচলেকা নিয়ে সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। রোববার দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে কলাবাগান থানা থেকে দুজনকে মুক্তি দেওয়া হয়।

কলাবাগান এলাকার একটি মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা রত্না। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য।

রোববার সকালে ওই মাঠে ইট-সুরকি ফেলা হলে সেখানে গিয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন সৈয়দা রত্না। একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে তাঁকে আটক পরে পুলিশ। পরে তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলেকেও ধরে নেওয়া হয়।

দিনভর মা–ছেলেকে থানায় আটকে রাখা হয়। তাঁদের আটকের খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে ওই মাঠে যান মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূরসহ কয়েকজন।

পরে রাতে মা–ছেলের মুক্তির দাবিতে মানবাধিকারকর্মী ও উদীচীর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন কলাবাগান থানার সামনে। সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলের মুক্তি দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘হে পুলিশ আমার মা কই’, ‘পুলিশ আমার বোন কোথায়’, ‘পুলিশ আমার ভাই কোথায়’, ‘মাঠ দখল করে থানা চাই না’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

রাত ৯টার দিকে থানার সামনে থাকা উদীচীর সদস্য নাজিয়া নিগার বলেন, নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণেই সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে পুলিশ হয়রানি করছে।

এ সময় কলাবাগান থানা–পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সৈয়দা রত্নার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুটি মামলা দেওয়া হচ্ছে। এরপর কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র বাইরে যান। থানায় ফিরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নয়, শুধু সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সৈয়দা রত্নার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে। আর তাঁর ছেলেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ওসি পরিতোষ এ ঘোষণা দেওয়ার পরপরই তাঁর মোবাইলে একটি কল আসে। তখন পাশে গিয়ে ফোনে কথা বলেন তিনি। মুঠোফোনে কথোপকথন শেষে ওসি বলেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে না। মা–ছেলে দুজনকেই ছেড়ে দেওয়া হবে। শুধু মায়ের কাছ থেকে একটি মুচলেকা নেওয়া হবে।

এরপর সৈয়দা রত্নার কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। মাঠ রক্ষার আন্দোলন করবেন না এবং ডাকলে যেকোনো সময় থানায় হাজির হবেন—এ শর্ত দিয়ে মুচলেকা নেওয়া হয়।

থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রত্না বলেন, ‘আমাকে থানায় এনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এখন এর বেশি আর কিছু বলতে পারছি না।’

পান্থপথের উল্টো দিকের গলির পাশে একটি খোলা জায়গা রয়েছে। এটি তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করে। পাশাপাশি মাঠটিতে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হয়।

এই মাঠে কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এর প্রতিবাদ করছেন স্থানীয় লোকজন।

মাঠটি রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী গত ৪ ফেব্রুয়ারি পান্থপথের কনকর্ড টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন করেন। ‘কলাবাগান এলাকাবাসী’র ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে স্থানীয় শিশু-কিশোর ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন। এতে মানববন্ধনের সংগঠকদের অন্যতম ছিলেন সৈয়দা রত্না।

রত্নার মেয়ে শেউঁতি শাহগুফতা বলেন, কলাবাগানের ওই মাঠটিতে ইট-সুরকি ফেলার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করায় বেলা ১১টার দিকে তাঁর মা সৈয়দা রত্না এবং ভাইকে ধরে নেওয়া হয়। তাঁর মা মাঠটি রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘মাঠে গত রাতে ইট-সুরকি ফেলছিল পুলিশ। সকালে মা মাঠের সামনে গিয়ে ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। তখন তাঁকে আটক করা হয়। পরে আমার ভাই বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এলে তাকেও ধরে কলাবাগান থানায় নিয়ে যায়।’

দুজনকে দিনভর থানায় আটকে রাখা হয়। তাঁদের আটকের খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে ওই মাঠে যান মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূরসহ কয়েকজন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা একটা অপরাধী সমাজ চাই না। তাই দেশের প্রতিটি এলাকায় শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ দরকার। মাঠের জায়গায় থানা করে অপরাধ কমানো যাবে না। বেশি করে মাঠ থাকলেই অপরাধ কমবে।’ তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য বিকল্প খেলার মাঠ না দেওয়া পর্যন্ত ওই স্থানে থানা বা অন্য কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হোক তা আমরা চাই না।’

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েকটি শিশুর কান ধরে ওঠবস করায় পুলিশ। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।