বরিশাল ব্যুরো
প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে বরিশাল। সময় টিভির বরিশাল ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক অপূর্ব অপুকে অপহরণচেষ্টায় জড়িতরা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বরিশালের সর্বস্থরের মানুষ।
বুধবার (১ জুন) সকালে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে ডাক দিলে তা জন সমুদ্রে রূপ পায়।
অর্ধশত সামাজিক,সাংস্কৃতিক, পেশাজীবি ও প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ আন্দোলনে একাট্টা হয়ে অপুকে অপহরনকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। সমাবেশে সাংবাদিক,শিক্ষক,সংস্কৃতি কর্মী, রাজনৈতিক নেতারা আল্টিমেটাম দেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের ধরতে না পারলে বরিশালে বৃহত্তর কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা দেওয়া হবে।
নির্ধারিত সময় সকাল ১১ টার অনেক আগেই গোটা সদর রোড এলাকা লোকেলোকারন্য হয়। সমাবেশে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবত বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাসির উদ্দীন বাবুলের সভাপতিত্বে আন্দোলনে একাতত্বতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, বরিশাল আইনজীবী সমিতি সাবেক সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল,শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন,বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন, সাধারণ সম্পাদক ফিরদাউস সোহাগ,বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ,বরিশাল আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, বিএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ স ম ইমামুল হাকিম, বিএম কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মিথুন সাহা, বরিশাল টেলিভিশন মিডিয়া এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আকতার ফারুক শাহীন, বরিশাল ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিইমজা) এর সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সুমন,ন্যাশনাল ডেইলিজ ব্যুরো চীফ এ্যাসোসিয়েশন অফ বরিশালের সভাপতি পুলক চ্যাটার্জী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার ফারুক শাহিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান রাহাত খান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন বরিশাল ব্যুরো প্রধান মুরাদ আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাকের বরিশাল অফিস প্রধান শাহীন হাফিজ,পরিবেশ আন্দোলন নেতা শুভঙ্কর চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন শিপলু ছাড়াও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা,বরিশাল নিউজ এডিটরস কাউন্সিল, সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি,বরিশাল ফটো সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ, বরিশাল টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সাংবাদিক সংগঠন ,সামাজিক সংগঠন , রাজনৈতিক সংগঠন,নাগরিক সমাজ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ।
সমাবেশে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে অপুর ওপার হামলা ন্যাক্কারজনক। আমরা সাংবাদিকরা এমন ঘটনায় চিন্তিত। অপুর মতো একজন সাংবাদিকের উপর যদি দিনে দুপুরে এমন হামলা হয় তাহলে সাধারণ মানুষ তো আরও নিরাপত্তাহীনতায় আছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এমন দাবি জানাচ্ছি।
সমাবেশে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, অপু আপদমস্তক সাংবাদিক। আমি অপুকে ছোটবেলা থেকে চিনি। ও কোনদিন ও অন্যায়ের সাথে আপোস করেনি। অপুর মতো একজন নামকরা সাংবাদিকের উপর এমন হামলা ও অপহরন চেস্টা আসলেই আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। আমরা দ্রুত এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গেফতারের দাবি জানাই।
বরিশালে এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার আক্তার ফারুক শাহীন বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন জেহাদ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল নগরীর উত্তরাঞ্চলে। সেনা সদস্যের জমি দখল ও চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস যতরকম অপকর্ম আছে করেছে সে। জেহাদের একটা নিজস্ব বাহিনীও ছিল। এছাড়া এ ঘটনায় জড়িত বাকি তিনজনও এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। এরমধ্যে ট্যারা হাবিব, নূরে আলমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আর চিড়া মামুনের বিরুদ্ধেও মাদকের মামলা রয়েছে। এসব সন্ত্রাসিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন বলেন, আমাদের দাবি স্পষ্ট। প্রশাসন কি করে আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।দ্রুত সব অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা না হলে আমাদের আন্দোলন আরও কঠিন হবে।
বরিশাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান মুরাদ আহমেদ বলেন, আজকের এই মানববন্ধনে জনসাধারণের উপস্থিতিই প্রমান করে অপু কতোটা সৎ সাংবাদিক। আমি শুধু সবাইকে একটি কথা হুশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই বরিশালে সন্ত্রাসের দিন শেষে সাংবাদিকদের দিন শুরু।
সংস্কৃতিজন শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, সাংবাদিক অপু জাতীয় পুরস্কারপ্নাপ্ত একজন সংস্কৃতিকর্মী। সাংবাদিকতায় তার সুনাম সর্বত্র। তার ওপর এমন হামলা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সামিল।
এদিকে মানববন্ধন অংশ নিয়ে সাংবাদিক অপুকে অপহরণ চেস্টার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতারা।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ বলেন, অপু যেমন বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে ঠিক তেমনি তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক কর্মীও। অপুর উপর এমন হামলা শুধু সাংবাদিক অঙ্গনে হুমকি না। এমন হামলা প্রমান করে দেশের সাংস্কৃতিকে যারা ধ্বংস করতে চায় তারা এ হামলায় জড়িত। আমি অবিলম্বে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বরিশাল আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, অপু একজন নামকরা সাংবাদিক তার উপর এমন হামলা মেনে নেওয়া কঠিন। পুলিশ দ্রুত সবাইকে গ্রেফতার করবে বলে আশা রাখি।
এদিকে শান্ত বরিশালকে অশান্ত করার চেস্টা কারিরাই সাংবাদিক অপুকে অপহরণের চেস্টা চালিয়েছে বলে দাবি করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, দেশ আজ উন্নয়নের পথে হাটছে। এমন সময় গনমাধ্যম কর্মীদের টার্গেট করে যারা এসব করছেন তারা সাবধান হয়ে যান। আমার প্রধানমন্ত্রী অপুর বিষয়টা জানে। আমারও জনতে হবে কেন অপুর উপর এমন হামলা। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সব অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়েছে। আপনারা দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনুন যদি না পারেন আমাদের বলুন। আমি নিজে খুঁজে বের করে তাদের আপনাদের হাতে তুলে দিব।
এদিকে মামলা হওয়ার পর থেকেই আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে বলে দাবি করছে পুলিশ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) ফজলুল করিম জানান, সিসি টিভি ফুটেজ দেখে আমারা অপরাধীদের সনাক্ত করেছি। আমাদের অভিযান চলছে। দ্রুত আমরা অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
এদিকে গত ২৯ মে বিকেল সাড়ে ৩ টায় সময় টিভির বরিশাল অফিসে যাওয়ার পথে ব্যুরো প্রধান অপূর্ব অপুকে অপহরণচেষ্টা চালায় একদল সন্ত্রাসী। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা গেলেও এখনও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা।