নিজস্ব প্রতিনিধি : কালিগঞ্জে প্রবাহমান একাধিক খালকে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে ইজারা নিয়ে দখল করে আসছিলেন প্রভাবশালীরা।
দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে থাকায় খালগুলো মরে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। ফলে বর্ষা মৌসুমে এসব খালগুলো অত্র অঞ্চলের মানুষের গলার কাটা হয়ে দাড়াতো। পানি নিস্কাশনের খাল মরে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে ভোগান্তিতে পড়তেন তারা।
শুষ্ক মৌসুমে পানি না পেয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ত। চরম বিপাকে ছিলো সেখানকার মৎস্য চাষীরাও ।
তবে সম্প্রতি কালিগঞ্জের তিনটি প্রবাহমান খাল প্রভাবশালী দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে খনন করে দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এতে খালগুলো প্রাণ ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি সেসব অঞ্চলের কৃষকদেরও মুখে হাসি ফুটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কালিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য চাষের উন্নতির লক্ষে জলাশয় সংস্কার প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে এবং কালিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের বাস্তবায়নে কালিগঞ্জের রতনপুর ইউনিয়ন কলকলিয়া খাল, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ঘোষখালী খাল এবং তারালি ইউনিয়নের তারালি খাল ৩টি পুন:খনন করা হয়েছে। এছাড়া কুশলিয়া ইউনিয়নের ভদ্রখালী এলাকায় একটি পুকুর পুন:খনন করা হয়েছে।
পুকুরটি ১৯০৪ সালের পর প্রথম পুন:খনন ও সংস্কার করায় মানুষের সুপেয় পানির সঙ্কট কাটাতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে খননকৃত কলকলিয়া খালের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৯ শ ৪০ফুট এবং প্রস্থ ৮০ফুট। ঘোষখালী খালের দৈর্ঘ্য ৫হাজার ৮শ ফুট এবং প্রস্থ ৮৫ ফুট এছাড়া তারালি খালের দৈর্ঘ্য ৫হাজার ৮শ ফুট এবং প্রস্থ ৮৫ ফুট খনন করা হয়েছে। প্রতিটি খাল খননের জন্য ৩৩লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ ছিলো।
খালগুলো খনন করায় অত্র এলাকায় কৃষির ও মৎস্যের ফলন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি খালের পাশ্ববর্তী বাসিন্দাদের জন্য পানির অবাধ সরবরাহও নিশ্চিত হবে এবং খালের মাধ্যমে মাছের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি পাবে।
এটাকে যদি ধরে রাখা যায় তাহলে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রতনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শেবানী মন্ডল বলেন, কলকলিয়া খাল দিয়ে ইউনিয়নের শত শত বিঘা বিলসহ বসতবাড়ীর পানি নিস্কাশিত হয়। খালটি অবৈধ দখলের কারণে সরু নর্দমায় পরিণত হয়েছিল।
এতে কৃষকরাও ঠিকমত পানি না পেয়ে চাষাবাদ করতে পারত না। মৎস্যচাষীরাও বিপাকে পড়ত। খালটি দখলমুক্ত করে খনন করায় সকলেরই সুবিধা হয়েছে। কৃষকরা পানি নিতে পারবে। মৎস্যচাষীরাও উপকৃত হবে।
পাশাপাশি আমরাও জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবো। রতনপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বর বাবু গাজী বলেন, খালটি খনন করায় এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবে। খালটি কোনভাবে ইজারা না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রতনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলম আল রাজী টোকন বলেন, কলকলিয়া খালটি কালিন্দি নদীর সাথে সরাসরি সংযুক্ত। অথচ প্রভাবশালীরা বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে ইজারা নিয়ে দখল করে খালটিকে প্রায় মেরে ফেলেছিল। ওই সব দখলদারদের উচ্ছেদ করে মৎস্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে খনন করে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। খালটি এলাকার মানুষের জীবন জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি। এদিকে দক্ষিণশ্রীপুর ইউনিয়নের টোনা গ্রামের ঈশ্বর রাধাপদের পুত্র গণেশ সরকার বলেন, ঘোষখালী খালটি দিয়ে বাঁশঘাটা, নবিননগর, বেড়াখালী, সাড়াতোলা, শ্রীপুর, ফতেপুর, গোবিন্দকাটি, সোনাতলাসহ প্রায় ১০টি গ্রামের পানি নিস্কাশিত হয়ে গোয়ালঘাষিয়া নদীতে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এসব অঞ্চলের মানুষ বিপাকে পড়ত। খালটি খনন হওয়ায় কৃষক ও মৎস্য চাষীসহ সকলেই উপকৃত হবে। কালিগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার নাজমুল হুদা বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় খালগুলো খনন করা হয়েছে। এতে অত্র এলাকায় কৃষির ও মৎস্যের ফলন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি খালের পাশ্ববর্তী বাসিন্দাদের জন্য পানির অবাধ সরবরাহও নিশ্চিত হবে এবং খালের মাধ্যমে মাছের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি পাবে। এটাকে যদি ধরে রাখা যায় তাহলে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।