সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় প্রধান শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন : সভাপতিকে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম

By daily satkhira

August 21, 2022

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, মারধর ও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বহিষ্কার করার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমানের শাস্তি ও বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় সড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

পরে পুলিশ ও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের আশ্বাসে অবরোধ সরিয়ে বিদ্যালয় মাঠে ক্লাস বর্জন করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতিকে যতোদিন বিচারের আওতায় আনা না হবে ততোদিন পর্যন্ত শ্রেণীকক্ষে পা রাখবেন না জানিয়ে শিক্ষার্থীরা অনিদিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমানকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

এর আগে শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে বিদ্যালয়ের ভেতরেই প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত ও মারধর করেন বিদ্যালয়টির সভাপতি মাহবুবর রহমান। পরে শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করেন। এসময় তারা আন্দোলনে মাহবুবর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে শাস্তি ও বিচারের দাবি জানান।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এসএমসি কমিটির নির্বাচনে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম কোন পক্ষ অবলম্বন না করায় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমানের সাথে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় তার। এর এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি তার নিজের লোকজন দিয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক দূর্নীতির অভিযোগ আনেন। আর কোনপ্রকার তদন্ত ছাড়াই শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে দু’মাসের জন্য বহিষ্কার করেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহাবুবর রহমান। এসময় জোরপূর্বক ভাবে গলাধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককে মারধর করে তার রুম থেকে টেনে হেঁচড়ে বের করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির একাধিক সহকারি শিক্ষকসহ ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ এনে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। পূর্ব শত্রুতার কারনে প্রধান শিক্ষককে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহাবুবর রহমান। এরই অংশ হিসেবে প্রধান শিক্ষককে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাকে মারধর করেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি।

প্রধান শিক্ষক দূর্নীতিগ্রস্থ না বরং প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহাবুবর রহমান দূর্নীতিগ্রস্থ জানিয়ে তারা বলেন, পুরো বিদ্যালয়টা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহাবুবর রহমানের জিম্মায়। তার বিরুদ্ধে একাধিক দূর্নীতির মামলা রয়েছে। তবে তার দূর্নীতিতে সাফাই না দেয়ায় এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা তাদের।

প্রধান শিক্ষককে মারধর প্রসঙ্গে তারা বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক যদি দূর্নীতিগ্রস্থ হয় তাহলে তার জন্য দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে। তবে আইনের উর্দ্ধে যেয়ে একজন শিক্ষককে মারধর করার পাশাপাশি গলা ধাক্কা দিয়ে অফিস রুম থেকে বের করাটা সভাপতির ঠিক হয়নি। তাছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় সবার সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষককে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে আদেও ওই মাসিক সভায় এধরণের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সভাপতি তার একক ক্ষমতাবলে এসব করেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

এব্যাপারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের কাছে বই বিক্রিসহ স্কুল ফান্ডের টাকা উত্তোলনের মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে কোনপ্রকার তদন্ত ছাড়া প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে মারধরসহ তাকে বহিস্কার করার প্রতিবাদে তারা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

এসময় প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল রেখে স্কুল কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বহিষ্কার করলে তারা আবার শ্রেনীকক্ষে যোগদান করবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, আমাকে গতকাল স্কুল কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান গায়ে হাত তুলে লাঞ্চিত করেন এবং আমার বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম শিক্ষার্থীদের কাছে বই বিক্রি স্কুল ফান্ডের টাকা উত্তোলন এসব মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে কোন তদন্ত ছাড়া আমাকে বহিস্কার করা হয়েছে। পরে স্কুলের শিক্ষার্থী জানতে পেরে সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছে। আমি তাদেরকে ক্লাস যাওয়ার কথা বলেছি তবে তারা না করে আন্দোলন করছে।

এব্যাপারে অভিযুক্ত বিদ্যালয়টির সভাপতি মাহাবুবর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এপ্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, বিষয়টি সমন্ধে কোনকিছু জানেননা তিনি। খোজঁ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। খোজঁখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।