সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ইউপি চেয়ারম্যান বিশাখার বিরুদ্ধে ওয়ারেশ কায়েম সনদ না দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

By daily satkhira

August 22, 2022

নিজস্ব প্রতিনিধি : ওয়ারেশ কায়েম সনদ না দিয়ে হয়রানির অভিযোগে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক নারী। ঘটনাটি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার ১নং জয়নগর ইউনিয়নে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জয়নগর ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের মৃত এরশাদ আলী গাজীর স্ত্রী রেকছোনা খাতুন তার স্বামী মারা যাওয়ার পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারেশ কায়েম সনদ পত্র নিতে গেলে টালবাহানা শুরু করেছে কলারোয়া উপজেলার একমাত্র মহিলা চেয়ারম্যান জয়নগর ইউপির বিশাখা তপন সাহা, ইউপি সদস্য রেজাউল ও তানজিলা।

রেকছোনা খাতুনের স্বামী এরশাদ আলী গাজী গত ৩ আগস্ট ২০২০ ইংরেজি তারিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে এরশাদ আলী গাজী এক স্ত্রী ও ১৫ বছরের পুত্র সন্তান রেখে যান। রেকছোনা খাতুন ২০২১ সালের ২১ শে জুন তারিখে জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন আল মাসুদ বাবুর স্বাক্ষরিত একটি ওয়ারেশ কায়েম সনদপত্র নেন পরিষদ থেকে। কিন্তু সেটি বেশ আগের হওয়ায় রেকছোনা খাতুনের ব্যক্তিগত কাজের জন্য বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারেশ কায়েম সনদপত্রের প্রয়োজন। তাই চলতি বছরে রেকছোনা খাতুন তার স্বামীর ওয়ারেশ কায়েম সনদপত্রের জন্য জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করেন। কিন্তু ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের মজিদ মোড়লের নাতজামাই মো. মুকুল মোড়ল, বসন্তপুর গ্রামের এরশাদ বিশ্বাসের পুত্র মো. শফিকুল রহমানের ইন্ধনে ০১নং জয়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহা, ইউপি সদস্য রেজাউল ও তানজিলার যোগসাজসে রেকছোনাকে তার স্বামীর ওয়ারেশ কায়েম সনদ থেকে বাদ দিয়েছে। রেকছোনার স্বামীর ব্যাংকে রেখে যাওয়া টাকা এবং তার স্বামীর সম্পত্তির অধিকার থেকে বাদ দিয়ে তার বাড়ি দখল করবে বলে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে চেয়ারম্যান সহ তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। ইউপি চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহা রেকছোনার স্বামীর ভূয়া তালাকের এফিডেভিট দেখিয়ে তাকে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সূত্র আরো জানায়, রেকছোনা খাতুনের স্বামী মৃত্যুর মাত্র ১০ মাসের মাথায় তৎকালীন চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন আল মাসুদ বাবু ওয়ারেশ কায়েম সনদপত্র দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ২১ জুন তারিখে ০১নং জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২৩০/২১ নং স্মারকে তৎকালীন সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগমের তদন্তের মাধ্যমে এরশাদ আলী গাজীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারেশ দুইজন। একজন তার পুত্র আব্দুল্লাহ আল-মামুন এবং স্ত্রী মোছা. রেকছোনা খাতুন। অথচ চলতি বলছে রেকছোনা বর্তমান চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহার নিকট আবেদন করলে চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহা একটি ভূয়া এফিডেভিট দেখিয়ে রেকসানার স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে তার ওয়ারেশ কায়েম সনদ দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন বলছেন রেকছোনা।

তিনি আরো জানান, চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহা ভূয়া যে তালাক নামার অজুহাতে রেকসানাকে ওয়ারেশ কায়েম সনদ থেকে বাদ দিতে চাচ্ছেন ওই আইনজীবী তার ভূয়া স্বাক্ষরিত চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহা যে ভূয়া তালাক নামা তৈরি করেছেন সেটিরও প্রত্যায়নপত্র দিয়েছেন। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের এ্যাডভোকেট ও নোটারি পাবলিক এ.টি.এম আলী আকবার গত ৩১ জুলাই ২০২২ ইংরেজি তারিখে ১৬ নং স্মারকের মাধ্যমে তিনি প্রত্যায়নপত্র প্রদান করছেন যে রেকছোনা খাতুনকে তার স্বামী মো. এরশাদ গাজী গত ২৯.০৫.২০২২ তারিখে তার কার্যালয়ের ৪৪৭ নং সিরিয়ালের মাধ্যমে যে তালাক কপি প্রদান দেখাচ্ছেন সেটি সঠিক নয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে কেউ তার কাছে যায়নি, বরং তার নথিপত্র খুঁজেও দেখেছেন যে ৪৪৭ নং সিরিয়ালের কোনো এফিডেভিট এর সন্ধান পান নি। উক্ত ঘটনায় চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহা আইনজীবি এটিএম আলী আকবারের নামে মামলা করবেন বলে ফোনে হুমকি প্রদর্শন করেন। বিশাখা চেয়ারম্যান গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইংরেজি তারিখে ইউনিয়ন পরিষদের ৮৩/২২ নং স্মারকের মাধ্যমে এরশাদ আলী গাজী স্ট্রোকজনিত কারনে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে প্রত্যায়ন দেন।

রেকছোনা বলেন, ভূয়া এফিডেভিটের বলে চেয়ারম্যান বিশাখা আমাকে যে হয়রানি করছে তার সঠিক প্রমাণ কপি আমি আমার আবেদন কপিতে সংযুক্ত করে ইউএনও স্যারের কাছে দিয়েছি। আশা করছি আমি সুষ্ঠু বিচার পাবো। তাই যাতে রেকছোনা ওয়ারেশ কায়েম পেতে পারে তার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ সহ সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। একইসাথে নারী ইউপি চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহা যাতে তাকে পরবর্তীতে কোনো ক্ষতিসাধন করতে না পারে তার বিহীত ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানিয়েছে।

রেকছোনার ওয়ারেশ কায়েম সনদের ব্যাপারে জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহা বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য এবং গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে তদন্ত করিয়েছি। তারা বলেছেন দেয়া যাবেনা। সেজন্য ওয়ারেশ কায়েম সনদ দিতে পারছিনা।

এ ব্যাপারে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস জানান, জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশাখা তপন সাহার নিকট আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চিঠি করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি চেয়ারম্যানকে মোবাইলে ফোন করেও বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলে জানান।