আশাশুনি

আশাশুনি জলমহলের অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণের সিদ্ধান্ত ৬ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি!

By daily satkhira

August 23, 2022

আশাশুনি ব্যুরো: গত ফেব্রুয়ারি মাসে আশাশুনি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বুধহাটা ইউনিয়নের একাধিক খাল জলমহলের অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিন্ধান্ত গ্ৰহনের পর ৬মাস অতিবাহিত হলেও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্ৰস্থকারি অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণে আজও পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্ৰহন করতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন ইউনিয়নবাসি।

জানাগেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের আশাশুনি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ডাবলু কর্তৃক ইউনিয়নবাসিকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত সরকারি খাল/জলমহল গুলো থেকে অবৈধ বাঁধ বা নেট-পাটা অপসারণের দাবির প্রেক্ষিতে মাসিক সভায় উপস্থিতির সর্বসম্মতিক্রমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়ানুর রহমান সভার কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ করেন এবং প্রস্তাবের বিপরীতে ভিন্ন মত না থাকায় কার্যবিবরণী দৃঢ়করণ করেন। কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক সৃষ্ট প্রতিবন্ধতার কারনে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্ৰস্থ হয়ে বর্ষা মৌসুমে ইউনিয়নের মৎস্য চাষী, কৃষি ফসল, রাস্তা এমনকি কাঁচা ঘরবাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্ৰস্থ হলেও উপজেলা প্রশাসনের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। বুধহাটা ইউনিয়নসহ জেলা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত বৈউলা, শ্বেতপুর, গুড়গুড়ি, বাউশুলী, পাইথালী, মহেশ্বরকাটি মৌজার একাধিক সরকারি খাল/জলমহল অবৈধ দখল, অবৈধ বাঁধ বা নেট-পাটা দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্ৰস্থ করায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মৎস্য চাষি ও কৃষকদের বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। গুটি কয়েক অসাধু ব্যক্তির কারনে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও উপজেলা প্রশাসনের কোন কার্যকরী বা স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা দেখতে পাওয়া যায়নি এমনটি দাবি ভুক্তভোগীদের। জানাগেছে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এসকল খাল জলমহল গুলো ইজারা নিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করে অবৈধ বাঁধ বা নেট-পাটা দিয়ে মৎস্য চাষ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।

কোথাও কোথাও ইজারা ছাড়াও সম্পূর্ণ গায়ের জোরে জবর দখল করে নেট-পাটা বসিয়ে এমনকি বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ করছে। সোমবার সকাল থেকে বুধহাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজার খাল জলমহল ঘুরে দেখা গেছে, উল্লেখিত মৌজার অধিকাংশ খাল জলমহলের একাধিক স্থানে নেট-পাটা বসিয়ে মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। বৈউলা খাল জলমহলটির একাধিক স্থানে এমন ভাবে বাঁধ দেয়া হয়েছে যে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা সরকারি খাল জলমহল। এসময় বিভিন্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, খাল জলমহল গুলো নিয়ে কতৃপক্ষের উদাসীনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বৈউলা খাল জলমহলের ১৪একর খাল জলমহল কুঁন্দুড়িয়া মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতির অনুকুলে ইজারা দিয়ে তার থেকে ৩ বছর মেয়াদে ইজারা মূল্য সরকারি খাতে জমা নিয়ে আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও তাকে জলমহলের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এমনকি কে বা কাহারা জলমহলটি দখল করছে সে বিষয়েও খোঁজ খবর রাখেন না কতৃপক্ষ। এবিষয়ে জানতে চাইলে বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ডাবলু বলেন, মাসিক মিটিং হয় আশাশুনির ১১টি ইউনিয়নের জনগনের কল্যানের জন্য। মাসিক সভায় বসে অনেক নীতি কথা বলা হয় কিন্তু বাস্তবে একটাও বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। মাত্র ১০ জন অসাধু লোক খাল গুলো নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নেট-পাটা ও আড়ের বাঁধ দিয়ে তিন লক্ষ মানুষের বিভিন্ন প্রকার ফসল নষ্ট করছে অথচ কাহারো কোন খেয়াল নেই সেদিকে। খাস খাল গুলো অবৈধ কাগজ তৈরি করে হাইকোর্টে বৈধ ইজারার বিপরীতে স্থগিতাদেশ করে রেখেছে সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতারের কর্মকর্তাদের কোন খেয়াল নেই। আমরা জনপ্রতিনিধিরা ইউনিয়ন ভুমি অফিস ও এসিল্যান্ড অফিসে গেলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কাগজপত্র দিয়ে সাহায্যতো দুরের কথা আমাদের সাথে ভালোভাবে কথাই বলতে চায় না।

এরা সবাই ঐ সব জলমহল দস্যুদের দোসর। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি জনগনের প্রতিনিধি হিসাবে জনগনের সম্পদ রক্ষা করার জন্য জনগনকে সাথে করে নিয়ে খু্ব শিঘ্রই দা, কোদাল, লাপনা নিয়ে খাল থেকে নেট-পাটা, বাঁধ কেঁটে দেবো। তাতে যা হয় হবে, জনগনের ফসলতো বাঁচবে। বহুবার উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের এর সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছি শুধু আশ্বাস দেয় কাজ হয় না। যখন সব পানিতে তলিয়ে যাবে তখন লোক দেখানো একটা শো করবে চিরকাল যা দেখছি। সোনর বাংলাদেশের সোনার ফসল নষ্ট হচ্ছে অথচ আমাদের কোন যায় আসে না আফসোস, বঙ্গবন্ধু কি এজন্যই দেশ স্বাধীন করেছিল?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়ানুর রহমান জানান, খাল জলমহল গুলো থেকে এর আগেও নেট-পাটা অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু অপসারণের কিছুদিন পর পুনরায় তারা একই কাজ করে থাকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উচিত হবে আমরা এগুলো অপসারণ করার পরে পূনরায় যেন বাঁধ বা নেট-পাটা বসিয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে নজর রাখা। তিনি আরও বলেন, পিছনে যেটা হয়েছে- হয়েছে। অতি দ্রুত এসকল খাল জলমহল গুলো সনাক্ত করে সেখানে বাঁধ বা নেট-পাটা অপসারণ পূর্বক দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহন করা হবে।

মরিচ্চাপ নদী পূনখননের কারনে মরিচ্চাপ নদীর সাথে সংযুক্ত সরকারি খাল এ এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় কোন ভুমিকা রাখতে পারছে না। এমতাবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব উল্লেখিত খাল জলমহল থেকে অবৈধ দখলদার, অবৈধ বা ও নেট-পাটা অপসারণ করতে না পারলে দু’এক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে বুধহাটা ইউনিয়নসহ সদরের ফিংড়ি ইউনিয়ন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংশ্লিষ্ট যথাযথ উদ্ধতন কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপে এসকল খাল জলমহল গুলো থেকে অবৈধ দখলদার, অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।