সাতক্ষীরা

কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা : দুইটি মামলায় একজনের সাক্ষ্য

By daily satkhira

September 18, 2022

নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সাতক্ষীরায় কলারোয়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দু’টি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ৮ম দিনে সাক্ষ্য দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এ্যাড. আজহারুল ইসলাম। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য্য করা হয়েছে। এ নিয়ে এ মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো।

রবিবার সকাল সোয়া ৯টায় জেলা কারাগার থেকে সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল -৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডলের আদালতে হাজির করানো হয় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৯ জনকে। আসামী উপস্থিতি ছিলেন।সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। স্বাক্ষীকে জেরার একপর্যায়ে আসামীপক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার এ্যসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাড. জয়নুল আবেদিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আমিরুল ইসলাম গত ধার্য তারিখে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলা একসঙ্গে সাক্ষ্য গ্রহণ না করা সম্পর্কিত আসামীপক্ষের আইনজীবীদের দায়ের করা একটি আবেদন বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় তারা এভিডেন্স এ্যক্ট এর ৩৩ সেকশনের ব্যাখা দেন। বাদির জবানবন্দি ২০০ ধারা মোতাবেক রেকর্ড করে পরবর্তীতে ১৫৩ ধারা মোতাবেক এফআইআর হিসেবে গণ্যা করার নির্র্দেশ দেওয়া যায়না বলে তারা ব্যাখ্যা করেন। এ ছাড়া দুটি মামলায় একই সাক্ষী একসাথে জবানবন্দি জেরা করা যাবে না ও শিশু আইনের মামলার আসামীর সঙ্গে পূর্ণবয়স্ক আসামীর এক সাথে বিচার না করার বিষয়টির আইনগত ব্যূাখ্যা তুলে ধরেন। তবে বিচারক সকল আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কাউন্টার মামলার জন্য যে আইনের ব্যাখ্যা বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার সঙ্গে অস্ত্র আইনের মামলার ব্যাখা এক নয়। তা ছাড়া শুরু থেকেই উভয়পক্ষ একই সাথে দুটি মামলার সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দি করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করলে আদালত তার উপর সম্মান রেখেই কার্যক্রম শুরু করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ বলেন, দুটি মামলার একসাথে সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দি করতে উভয়পক্ষ রাজী হয়। তারপর ১০ জনের সাক্ষী ও জেরা হয়ে গেছে। তাছাড়া শিশু আইনের মামলায় রকিবের বিরুদ্ধে চার্জশীট পূর্ণ বয়স্ক মানুষের সঙ্গে দেওয়া হলে প্রতিপক্ষরা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন। ২৬৫ সি ধারা মোতাবেক বাংলাদেশের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট এ সম্পর্কিত ব্যাখা দিয়ে আবেদন খারিজ করে নতুন করে চার্জূ গঠণের নির্দেশ দিয়েই আজকের আসামীপক্ষের একাংশের প্রশ্নের জবাবের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। ১০ জন সাক্ষীর পর এখন এ ধরণের আবেদন করে আদালতের সময় নষ্ট করা হচ্ছে, যাতে বিচার বিলম্বিত হয়। একপর্যায়ে তিনি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামীপক্ষের উপস্থাপিত প্রশ্নের আইনগত ব্যাখা দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার এ্যসোসিয়েশনের সহসভাপতি অ্যাড. মোহাম্মদ আলী, অ্যাড. সত্যরঞ্জন মণ্ডল, সরকারি ক্যেশুলী অ্যাড. শম্ভুনাথ সিংহ, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, অ্যাড. আব্দুস সামাদ, অ্যাড. ওকালত আলী, অ্যাড. আব্দুল বারী, অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহানাজ প্রমুখ।

আসামীপক্ষের আইনজীবী ঢাকা সুপ্রীম কোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশানের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আমিনুল ইসলাম, অ্যাড. আব্দুল মজিদ, অ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাড. মাসুদুল আলম দোহা, অ্যাড. মিজানুর রহমান, অ্যাড. লিওন, অ্যৗাড. শাহানারা পারভিন বকুল প্রমুখ। ।

প্রসঙ্গত,২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা কলারোয়ায় দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের ১ ডজন নেতা-কর্মী আহত হন। এঘটনায় করা হামলা মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতা-কর্মীকে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন সাতক্ষীরার চিপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির। এছাড়া গত ১৪ জুন অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের অপর দুটি মামলায় চার্জ গঠন করা হয়। এ পর্যন্ত ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৫০ জন আসামীূর মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।