প্রেস বিজ্ঞপ্তি : স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। আর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পূর্বশর্ত হলো তথ্যের উন্মুক্ততা। সরকার তথ্যের অবাধ প্রবাহের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ ও জনস্বার্থে তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন পাশ, স্ব প্রণোদিত তথ্য প্রকাশ নির্দেশিকা প্রণয়ন, অনলাইন ভিত্তিক জাতীয় তথ্য ভা-ার তৈরি, ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের ব্যবস্থাসহ নানান উদ্যোগ গ্রহণ করলেও এর সুফল এখনও সাধারণ জনগণ পাচ্ছে না, আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২১ উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সাতক্ষীরা আয়োজিত ’জনসাধারণের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় তথ্য বাতায়নের ভূমিকা: সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সনাক সদস্য মোঃ আবুল বাসার-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠক সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি জনাব পবিত্র মোহন দাশ। বৈঠকের শুরুতে সনাক সদস্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোঃ আব্দুল হামিদ বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান। সনাকের ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনায় যোগ দেওয়ায় জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। এরপর টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. রবিউল ইসলাম দিবসকে সামনে রেখে টিআইবি ও সনাকের উদ্যোগে জাতীয় তথ্য বাতায়নের অধীনে থাকা সাতক্ষীরা জেলার সকল সরকারি অফিসসমূহের ওয়েব পোর্টাল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেন।
৭টি কমন নির্দেশক বা তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা পর্যবেক্ষণের ফলাফল থেকে দেখা যায়, ৭০টি দপ্তরের ওয়েব সাইটের মধ্যে মাত্র ১৮টি দপ্তরের ওয়েব সাইটে পর্যবেক্ষণকৃত ৭টি তথ্য হালনাগাদ রয়েছে। আবার ৪টি দপ্তরের ওয়েব সাইটে পর্যবেক্ষণকৃত ৭টি তথ্যের একটিও নেই। তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিও) সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গিয়েছে ৭০টি দপ্তরের মধ্যে মাত্র ৪৫টি দপ্তরের ওয়েব পোর্টালে। উপস্থাপনা শেষে স্বদেশের নির্বাহী পলিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, এই আইন সম্পর্কে মানুষকে জানাতে সরকারি-বেসরকারী সকল পর্যায় থেকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। ওয়েব পোর্টালে যে তথ্য থাকে তা খুব বেশি কার্যকর না এবং এর উপর ভিত্তি করে কোন প্রকল্প গ্রহণ করাও সম্ভব হয় না। উত্তরণের অ্যাডভোকেট মোঃ মুনিরুদ্দিন আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সকল তথ্য পোর্টালে থাকলে দুর্নীতি অনেক কমে যেত। অগ্রগতি সংস্থার প্রতিনিধি মোঃ মামুন আলোচনায় অংশ নিয়ে কার্টার সেন্টারের সহযোগীতায় অগ্রগতি সংস্থার তথ্য অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, পরিবর্তন হচ্ছে। আরো হবে যদি আমরা সকলে সচেতন হই। প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী সুজন তাঁর নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, অনেক কর্মকর্তা যেমন জানেন না তথ্য চাইলে তাঁর করনীয় কি, আবার ানেক মানুষ জানেন না, যে এই অফিসে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছে। উপপরিচালকের কার্যালয়, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার বলেন, আমরা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, আমরাতো তথ্য দিতে প্রস্তুত, তবে অনেকে তথ্য চাওয়ার নামে হয়রানী করে, সেটা বন্ধ হওয়া উচিৎ। দৈনিক কালেরচিত্র-এর সম্পাদক আবু আহমেদ আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, জনগণ যাতে বুঝতে পারে এমন শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ। তিনি বলেন আমরা অনেকেই এই আইন বা ওয়েব পোর্টাল সম্পর্কে জানি না। এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করতে হবে। তিনি সনাক সাতক্ষীরাকে এমন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ করিমুল হক তাঁর বক্তব্যে তাঁর অফিসের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন এই আইনটি জনগণের আইন, আইনটি বাস্তবায়নে তাই জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি গোলটেবিল আলোচনায় উঠে আসা মতামতগুলো প্রতিবেদন আকারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার অনুরোধ জানান। এতে প্রশাসন থেকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সহায়ক হবে। জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহিম বলেন, সব সরকারী অফিসে যদি সিটিজেন চার্টার বড় করে প্রদর্শন করা থাকে তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে। সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহিদুর রহমান বলেন, তথ্য অধিকার আইনটি এশটি প্রয়োজনীয় আইন। এই আইনের সুফল পেতে সকলকে এ আইনটি সম্পর্কে জানতে হবে, চর্চা করতে হবে। জেলা তথ্য অফিসার মোঃ জাহারুল ইসলাম বলেন, এই আইনের প্রচার-প্রচারণার কাজটি আমার দপ্তর করে থাকে। তবে আমরা মূল ফোকাসটা দিচ্ছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে। কারণ শিক্ষার্থীরা যদি আইনটি সম্পর্কে জেনে চর্চা করতে পারে, তবে অচিরেই অবস্থার পরিবর্তন আসবে। ওয়েব পোর্টালে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। এটা ভাল দিক। এ পরিবর্তন ধরে রাখতে পারলে তথ্য অধিকার আইনের লক্ষ্য অর্র্জন সহজ হয়ে যাবে। তিনি টিআইবি ও সনাক সাতক্ষীরাকে সময়োপযোগী এ আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন লাইট হাউজের সঞ্জু মিয়া, হেড-এর নির্বাহী পরিচালক লুইস রানা গাইন, সনাক সদস্য ডাঃ সুশান্ত কুমার ঘোষ, ভারতেশ^রী বিশ^াস, জেসমিন আক্তার, মোঃ ইয়াসিন সিদ্দিক, আব্দুস সামাদ, মনিরুজ্জামান মুন্না, সৈয়দা সুলতানা শিলা, সনাকের চারটি এসিজি কমিটির সমন্বয়কবৃন্দ মোঃ হাছিবুর রহমান, সঞ্জয় কুমার হালদার, মোঃ অহিদুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম এবং সনাক সাতক্ষীরার ইয়েস সদস্যবৃন্দ।