খুলনা প্র্রতিনিধি : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চিঠি জাল করে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে বাবার নামে কমপ্লেক্স ও এতিমখানার অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করেন বর্তমান খুলনা জেলা পরিষদের প্রশানিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।
মন্ত্রণালয়ের চিঠি বিকৃত করে এই কাজ করার অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখার উপসচিব স্বাক্ষরিত এক পত্রে খুলনা জেলা পরিষদকে মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর আগে তিনি এস এম মাহবুবুর রহমান আগে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। তার বাবার বাড়িও সেখানে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান।
২০১৫ সালে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের এক সমন্বয় কমিটির সভায় মুক্তিযোদ্ধা স ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ৩৫ লাখ টাকা খরচ অনুমোদন চেয়ে পরদিন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় তাতে অসম্মতি জানালে সেই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মাহবুবুর রহমান ‘অ’ মুছে দিয়ে চিঠি জাল করেন। পরে জেলা পরিষদের টাকায় নির্মাণ করা হয় সেই এতিমখানা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অসম্মতি জানানোর পর চিঠির ‘অ’ মুছে দিয়ে তাকে ‘সম্মতি’ হিসেবে উপস্থাপন করে বাবার নামে এতিমখানা করে ধরা পড়েছেন খুলনা জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা।
ওই চিঠিতে জানানো হয়, ২০১৬ সালের ৬ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি চিঠিতে প্রকল্পের প্রস্তাবে ‘অসম্মতি’ জানানো হয়। তবে পরে ‘অ’ বর্ণটি মুছে ফেলে ‘সম্মতি’ শব্দ ব্যবহার করে বিকৃত করা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তদন্ত করে এই অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন।
খুলনা জেলা পরিষদের একটি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১২ জুলাই সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের এক সমন্বয় কমিটির সভায় ধুলিহরে মুক্তিযোদ্ধা স ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ৩৫ লাখ টাকা খরচ অনুমোদন চেয়ে পরদিন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই বছরের ২৮ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এতিমখানার প্রাক্কলন কত, এর আগে কত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেই অর্থে কী কী কাজ করা হয়েছে এবং এতিমখানায় কতজন এতিম বা অনাথ রয়েছে- এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পরে সব তথ্য পেয়ে ৩৫ লাখ টাকার অনুমোদন দিতে অসম্মতি জানানো হয়। এরপর সেই চিঠি জাল করে জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেন মাহবুবুর রহমান। পরে জেলা পরিষদের বরাদ্দে ৩৫ লাখ টাকায় স ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানা অ্যাকাডেমি নির্মাণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে এস এম মাহবুবুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন তোলেনি।
মো. আছাদুজ্জামান বলেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা পরিষদে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর কিছু প্রসেস রয়েছে। তারপর শুনানি হবে।