কে এম রেজাউল করিম দেবহাটা : সাতক্ষীরার দেবহাটায় মোবাইল গেমসের প্রতি আসক্তে কিশোর যুবকদের অবক্ষয় হচ্ছে। দিন দিন এই মোবাইলের বিভিন্ন গেমসের প্রতি তাদের আগ্রহে একদিকে যেমন যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে তেমনি পড়াশুনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারে ধাবিত হচ্ছে। তবে অভিভাবকদের অসচেতনতা ও সন্তানদেরকে ঠিকমতো খেয়াল না করার কারনে এই ধরনের অবক্ষয়ে আমরা ধাবিত হচ্ছি বলে সচেতন মহলের অভিমত। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তারা বিভিন্ন স্থানে একত্রে বসে এই মোবাইল গেমিংয়ের প্রতি ঝুকে পড়ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবন, ফাকা মাঠ, কোন নির্জন জায়ড়ায় জড়ো হয়ে একত্রে বসে এই মোবাইল গেমিং করা হয়।
এখন থেকে কিছু বছর আগে দেখা যেত যুবকেরা বিকাল হলে ব্যাট বল নিয়ে ফাঁকা জায়গা দেখে খেলা করতো আর এখন বিকাল হলে সবাই মিলে এক জায়গায় বসে ইন্টারনেট ভিডিও গেমম খেলে। তবে এই আসক্তিকে সম্প্রতি “মানসিক রোগের’ তালিকায়” অন্তর্ভূক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মনরোগ বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে বলছিলেন, ভিডিও গেমের অতিরিক্ত আসক্তিতে একদিকে যেমন শিশু-কিশোরদের সামাজিকীকরন বাধাগ্রস্থ হয়, তেমনি মেধা বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিষয়টিকে নজরে নিয়ে ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশ বিশেষ ক্লিনিক স্থাপনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত মনিটরিং শুরু করলেও এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ।
প্লে স্টেশনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা একটা গেমের প্রায় পুরোটা জুড়েই দেখা যায় যুদ্ধ, সহিংসতা আর রক্তপাত। এই খেলাগুলো আসলে শিশুদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক রোগ শ্রেণীকরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এছাড়া কারো সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়াদাওয়াই অনিয়নতো রয়েছেই। গেমিং ডিজঅর্ডারের লক্ষণ কী? ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ এর এমন বিভিন্ন লক্ষণের ব্যাপারে, “লক্ষ্য রাখতে হবে শিশু কতটুকু সময় ধরে গেম খেলছে। মা-বাবা খেলা বন্ধ করতে বললে সে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিছু কিছু বাচ্চা আছে যাদের গেম খেলতে নিষেধ করলে তারা ভীষণ রেগে যায়, ভীষণ চেঁচামেচি করে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে সে হয়তো গেমে আসক্ত। “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে গেমারদের দুই থেকে তিন শতাংশ ‘গেমিং ডিজঅর্ডারে’ ভোগে। শতাংশের হিসেবে সংখ্যাটি কম মনে হলেও বিশ্বের অনেক দেশই গেমিংয়ের আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। “সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তারা যদি এই বাচ্চাদের কথা ভেবে কিছু উদ্যোগ নেন তাহলে হয়তো পরিস্থিতি বদলে যাবে। এই যে আশেপাশে কিছু মাঠ আছে সেগুলো যদি সংস্কারের সুযোগ করে দেয় তবে হয়তো যুবকেরা এই গেমিং থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালেদ হোসেন সিদ্দিকী ও দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ মোবাইল গেমসের বিভিন্ন খারাপ দিক উল্লেখ করে জানান, এক্ষেত্রে অভিভাবকদের একটু সচেতনতার প্রয়োজন। দামী মোবাইল কিনে দেয়ার ক্ষেত্রেও সবাইকে সতর্ক হওয়া উচিত জানিয়ে ইউ এন ও ওসি বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে পুলিশ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছে। কিশোররা যাতে কোন অপরাধ কর্মকান্ডে না জড়ায় সেজন্য অভিভাবকদের একটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি জানান।