নিজস্ব প্রতিনিধি : নাম আল সাদিদ (ছদ্ম নাম)। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের গাভা গ্রামের সন্তান তিনি। সবে মাত্র লেখাপড়া শেষ করে কর্মসংস্থানের সন্ধানে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধী ছুটে বেড়াচ্ছেন। বাড়িতে অসহায় বৃদ্ধা পিতা-মাতা রয়েছেন। কিন্তু প্রায় ৬ মাস ঘুরেও একটি চাকুরি জোগাড় করতে পারেননি। না পারার প্রধান কারন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই দক্ষ, স্মার্ট এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক চান। যেটির কোনটিই আল সাদিদের নেই। শুধুমাত্র কয়েকটি সার্টিফিকেট রয়েছে।
জনশুমারী ও গৃহগণনা ২০২২ এর তথ্য মতে বাংলাদেশের যুবদের মধ্যে শিক্ষিতের হার ৯৪.৮৬% যেটি ১৯৯১ সালে ছিল শুধুমাত্র ৪৪.৭% যা বাৎসরিক বৃদ্ধির হার ১৪.৮৪% যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষিতের হার ৭৪.৬৬%। পাশাপাশি আইএলও (২০২২) এর হিসাব মতে বাংলাদেশে ১০.৬% যুবরা বেকারত্ব নিয়ে ভুগছে যেখানে জাতীয়ভাবে মোট বেকারত্বের হার ৪.২%।
অধিকাংশ যুবরা লেখাপড়া শেষ করে যেকোন একটি চাকুরী প্রত্যাশা করে । তাদের মধ্যে নিজেরা কিছু করা বা নিজেরা কিছু করে স্বাবলম্বী হওয়া এই প্রত্যাশা খুবই কম লক্ষ্য করা যায়। উদ্যোক্তা বা ব্যবসা করার জন্য যে সকল দক্ষতা দরকার যেমন চাহিদা বিশ্লেষণ, প্রশিক্ষণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ, বাজার বিশ্লেষণ, ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা এ সকল বিষয় সম্পর্কে যুবদের মধ্যে খুবই কম ধারনা লক্ষ্য করা গেছে। আল সাদিদ এর মত ৯৬% যুবরা জানান যে স্বকর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে কোন প্রকার দক্ষতা যেমন প্রশিক্ষণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ, চাহিদা নিরুপণ, ও বাজার বিশ্লেষণ সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। যদি এসব যুবকদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে দক্ষ করে তোলা যায়। তাহলেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। এদিকে, কর্মসংস্থানের এই তীব্র সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের যুব সমাজ আজ দিশেহারা। এ পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাপক যুব সমাজের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজন যুব কর্মসংস্থান অনুযায়ী উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলা। যা শুধু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানই সৃষ্টি করবে না দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
কর্মহীনতা থেকে হতাশা। এরপর মাদকে আসক্তি। এভাবেই প্রতিনিয়ত যুবকদের বড় একটি অংশ অপরাধজগতে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রলোভনে আজকাল যুক্ত হচ্ছে দেশদ্রোহী বিভিন্ন সংগঠনের সাথে।
অন্যদিকে, গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাধীন ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পে ১ কোটি ৭৯ লক্ষ ৪১ হাজার ১৬৫ টাকা বরাদ্ধ হয়েছিল। এছাড়া ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১ কোটি ৫লক্ষ ৬০ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাজেটের যুবদের প্রশিক্ষন বাবদ কোন বরাদ্ধ নেই। ফলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নারী এবং যুবদের যে সেবাটা পাওয়ার কথা সেটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যুবরা। অধিকাংশ যুবকদের স্থানীয় সরকারের বাজেট নিয়ে কোন ধারনাই নেই।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আল সাদিদ বলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র সার্টিফিকেটে আর চাকুরি হয় না। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা লাগবে। কিন্তু শুরুটা না করতে পারলে কিভাবে অভিজ্ঞতা হবে। তবে স্থানীয়ভাবে যদি সরকার(ইউনিয়ন পরিষদ) বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের মত বেকার যুব ও নারীদের দক্ষ করতে কোন প্রকল্প গ্রহণ করতেন। তাহলে আজকের এই সমস্যায় পড়তে হতো না।
সাতক্ষীরা জেলা রোভার স্কাউটস এর সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমান সময় শুধু সার্টিফিকেট থাকলে হয় না। প্রতিটি চাকুরির বিজ্ঞপ্তিতে অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ থাকে। কিন্তু একজন ছাত্র কিভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। সরকার যদি স্থানীয় সরকারের (ইউনিয়ন পরিষদ) মাধ্যমে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত। তাহলে সেখান থেকে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতো এবং সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারতো। নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারতো। আর সে ক্ষেত্রে স্থানীয়রা সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী ও যুব বান্ধব বাজেট প্রয়োজন। যা নিয়ে অধিকাংশদের কোন ধারনা নেই।