নিজস্ব প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে তালা উপজেলার ১নং ধানদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যার প্রভাব পড়েছে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও। আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত ধানদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ চলছে এখন কচ্ছপ গতিতে। এ কারণে বারবার নৌকার ভরাভুবি হচ্ছে বলে মনে করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তালা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪ হাজার ৭শ’ ৭১ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত জাহাঙ্গীর আলম। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সন্তোষ কুমার বিশ্বাস গরুর গাড়ী প্রতিক নিয়ে পান ৩ হাজার ৬শ’ ৬২ ভোট। এর আগে ২০০১ সালে সন্তোষ কুমার বিশ্বাস ধানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ৭ হাজার ২শ’ ৯০ ভোট পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম দ্বিতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসময় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী সন্তোষ কুমার বিশ্বাস পান ৫ হাজার ৪শ’ ৪৭ ভোট। তবে সকল রেকর্ড ভেঙে ২০২১ সালের নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার শহিদুল ইসলাম মাত্র ১ হাজার ২শ’ ৮০ ভোট পেয়ে সোচনীয় পরাজিত বরণ করেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানাজায়, ২০০৬ সালে সর্বশেষ ধানদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান ডাঃ সহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান মাস্টার শহিদুল ইসলাম। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরে ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। এছাড়া বিএনপি নেতাদের সাথে আতাত করে চলেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা। এছাড়া বিএনপির নেতাদের সাথে জুয়া খেলারও অভিযোগ রয়েছে অনেকে নেতার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক কর্মী জানান, সভাপতি সহিদুল ইসলাম ওরফে সহিদুল মেম্বর বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে নানান জটিলতায় ভূগছেন তিনি। আর মাস্টার শহিদুল ইসলাম ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে চুপসে গেছেন। ইউনিয়নে তার পরাজয় নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনা। ইউনয়ন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যক্তি হিসেবে তাকে অধিকাংশের পছন্দ না হওয়া, নেতা-কর্মীদের সাথে ভালো আচরণ না করা সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক সূত্র জানায়, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী একাধিক ব্যক্তি। সাধারণ সম্পাদক পদে যে সকল ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন পাঁচপাড়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ, ধানদিয়ার মিলন মেম্বর ও সেনেরগাঁতী গ্রামের মাস্টার কামরুল ইসলাম। তবে সভাপতি পদে সন্তোষ বিশ্বাস ছাড়া অন্য কারো নাম তেমন উচ্চারিত হচ্ছে না। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে আমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করলে আওয়ামী লীগকে পুনরজ্জীবিত করতে পারব। সন্তোষ বিশ্বাসের বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিমত, তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক এই অধ্যাপক আর্থিক ও সামাজিক ভাবে বেশ প্রতিষ্ঠিত।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পরাজয় ও নতুন কমিটি বিষয়ে অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বিশ্বাস জানান, দীর্ঘ দিন ধরে একই কমিটি থাকায় নেতাকর্মীরা হতাশ। সভাপতি ও সাধারণ ইচ্ছে মত চলেন। কমিটিতে কারা আছে সেটাও অনেকে জানেন না। এর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচনের আগে এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করা উচিত। এতে দলীয় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে ও নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় কর্মসূচীতে সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ সহিদুল ইসলাম বলেন, দলীয় কার্যক্রম ঠিক থাকলেও ভোটের সময় নেতা কর্মীরা নৌকার পক্ষে না থেকে বিরোধিতা করে। যার কারণে বারবার নৌকা পরাজিত হয়। নির্বাচনে খুবই কম ভোটপাওয়া বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার শহিদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দল, একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী সর্বপরি দলের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে এমন বিপর্যয় হয়েছে। ইউনিয়নে সাংগঠনিক দূর্বলতার কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনৎ ঘোষ বলেন, তালা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ক্রোন্দল নেই। তবে প্রার্থী অপেক্ষাকৃত দূর্বল ও কর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকায় ধানদিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচনে পরাজয় হয়েছে। এখনো কমিটি গঠনের বিষয়ে কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। জাতীয় কাউন্সিলের পরে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।