সাহিত্য

বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল

By Daily Satkhira

June 15, 2017

ঋতু পরিক্রমায় বাংলার বুকে এসেছে প্রেমময়, কবিতাময়, উচ্ছল বর্ষা। আজ পহেলা আষাঢ়। গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। বর্ষার আগমন যদিও এবার একটু আগে হয়েছে। তবু বর্ষাকালকে আরো একবার স্বাগত জানাই। স্বাগতম মেঘবতী জলের দিন।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে/আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। কবিগুরুর এই বন্দনা বৃষ্টির। গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সেজেছে পূর্ণতায়। নদীতে উপচে পড়া জল, আকাশে মেঘের ঘনঘটা এরই মাঝে হঠাৎ মেঘরাজের গর্জন। মেঘের ডাকে যেন বৃষ্টি কাঁদছে। যে কথাটি বলি বলি করেও বলা হয় না, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল নিয়ে যেন তারই আসার অপেক্ষা।

বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষা ঋতু কাব্যময়, প্রেমময়। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। কদম ফুলের মতো তুলতুলে নরম, রঙিন স্বপ্ন দুই চোখের কোণে ভেসে ওঠে, ঠিক যেমন করে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়।

অন্যান্য মাসের মতো আষাঢ়ের নামকরণও হয়েছে তারার নামে। সে তারার নাম ‘আষাঢ়’। অথৈ পানি তার বৈভব। ‘বাদল দিনের প্রথম’ ও ‘আষাঢ়স্য’ কদম ফুলসহ নিসর্গ চেতনা প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমিক মনকেই আলোড়িত করে। শিল্পীর বেলায় তো এর আবেদন আরও বেশি হয়। কবিরা কবিতার ফুল ফোটাতে থাকেন এই বর্ষায়। বিখ্যাত সব কবিতাও রচিত হয়েছে এই বর্ষায়।

বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা, কদম নাম না জানা আরও কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। প্রকৃতি থেকে শুরু করে গান, কাব্য, কবিতায় বাঙালি জীবন প্রবাহের প্রতিটি পরতে রয়েছে বর্ষার প্রত্যক্ষ প্রভাব।

অবশ্য বর্ষার কিছুটা ক্ষতিকর দিকও আছে। ভারি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল গ্রামের পর গ্রাম যে ভাসিয়ে নেয়, এই বর্ষা। বন্যাকবলিত নিচু এলাকার মানুষ তাই আতঙ্কে পার করে বর্ষা। তারপরও বর্ষা বাঙালির জীবনে প্রেমের বারতা নিয়ে আসে। তারা অভিবাদন জানায় বর্ষাকে।

প্রতিবারের মতো এবারো বর্ষাবরণের নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। আজ সকালে বর্ষা উৎসবের আয়োজন করছে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। এছাড়াও বর্ষার আগমনে রাজধানীজুড়ে রয়েছে নানা অনুষ্ঠান।