খেলা

বাংলাদেশ খেললেই শুধু বই থেকে মুখ সরাতেন বিসিএস পুলিশে প্রথম

By Daily Satkhira

June 15, 2017

কখনো ২২ গজে, কখনো ৬৫ গজী ব্যসার্ধকে কেন্দ্র করে আবর্তিত সবুজ গালিচায় গর্জে ওঠেন এগারো জন বাঘ। সঙ্গে গর্জন তরঙ্গ গ্যালারি হয়ে ছিটকে পড়ে লাল-সবুজের বর্গমাইল জুড়ে। তাতে ভেঙে যায় গভীর ধ্যানমগ্ন মুনীর সাধনাও। বইপোকা শাহ কামালের ধ্যানও ভাঙত বাংলাদেশ দলের খেলার সময়। টাইগাররা খেললে বইয়ে আর মুখ গুঁজে রাখতে পারতেন না বিসিএস পুলিশে প্রথম হওয়া এই কর্মকর্তা।

কামাল ৩৪তম বিসিএসে পুলিশে প্রথম হয়েছিলেন। বর্তমানে মৌলিক প্রশিক্ষণে রয়েছেন সারদা পুলিশ একাডেমীতে। নিজেও খেলাধুলা করতে পছন্দ করতেন। মেধাবী এই কর্মকর্তা জানালেন খেলা নিয়ে নিজের নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা। আদতে বই পাগল বলতে যা বোঝায়, পুলিশ কর্মকর্তা শাহ কামাল ছিলেন ঠিক সেটাই। বই আর বই ছাড়া অন্যকিছু খুব কমই ভাবাত তাকে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের খেলা হলেই ঘটত ব্যতিক্রম। যেকোন মূল্যে তখন খেলা দেখতেই হবে। মাইলের পর মাইল হেঁটে গিয়ে খেলা দেখার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।

বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য পরীক্ষার আগেও রাত জেগেছেন কামাল। এমনকি বিসিএস পরীক্ষা চলাকালেও বাদ দেননি টাইগারদের কোন ম্যাচ। ক্রিকেট অনুরক্ত এ কর্মকর্তা ধৈর্য সহকারে দেখেন বাংলাদেশের টেস্ট খেলাও। টেস্ট ক্রিকেটের একটি বলও মিস করতে চান না। এমনকি সারদা ট্রেনিং একাডেমীর কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যেও সর্বাত্মক চেষ্টা করেন খেলা দেখার।

প্রিয় দলের প্রিয় তারকাদের খেলার কথা বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এ কর্মকর্তা। হারিয়ে যান সুদূর অতীতে। ১৯৯৭ সালের ঘটনা। তখন তিনি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সেবার বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাছাইপর্বে কেনিয়াকে হারায়। খেলা নিয়ে চারপাশের মানুষের টানটান উত্তেজনা। তখন রেডিওতে শুনতে হয়েছিল খেলার ধারাবিবরণী।

কামালের অনেক ইচ্ছে ছিল টাইগারদের ১ বলে এক রানে বিজয়ী হওয়া শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি টিভিতে দেখার। কিন্তু বাসায় কোন টিভি ছিল না। বিটিভি খেলাটির ধারণকৃত অংশ সম্প্রচার করে দু’দিন পর। সেই খেলা দেখতেই খুব নিকট এক আত্মীয়ের বাড়িতে বহু পথ পাড়ি দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেদিন খেলা দেখতে পাননি তিনি। সেই বাড়িতে গেলে তাকে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। বলা হয়, বাসায় অনেক ভিড় হয়ে যাচ্ছে, এত মানুষের একসঙ্গে টিভি দেখা যাবে না।

সেই ঘটনায় খুব আহত হয়েছিলেন কামাল। দীর্ঘসময় সেই বাসার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছিলেন, একটু যদি ভেতর থেকে কেউ ডাক দেয়। সেদিন আর কেউ ডাকেনি তাকে। অগত্যা কষ্ট বুকে চেপেই ধরতে হয়েছিল বাড়ির পথ।

ক্রিকেটভক্ত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে জীবনের এই ঘটনাটি এখনও গভীরভাবে নাড়া দেয়। শাহ কামালের প্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি। মাশরাফির বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভক্ত তিনি। বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনাল নিয়েও অনেক উত্তেজনা কাজ করছে তার মাঝে। বিশ্বাস করেন ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ সেমিফাইনালের বাধা টপকে যাবে। জিতে ফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরবে। সেই শুভ মূহুর্তের অপেক্ষায় দিন গুনছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। শুধু এই তিনিই নন, পুরো ক্রিকেট পাগল বাঙালি জাতিই এখন তাকিয়ে এজবাস্টনের দিকে। বাংলাদেশে দলের জন্য সবার প্রার্থনা, প্রার্থনা মাশরাফিদের সাফল্যে জন্য।