আন্তর্জাতিক

সেহরি বাঁচাল হাজার প্রাণ

By Daily Satkhira

June 15, 2017

সেহরি খেতে উঠেই ধোঁয়ার গন্ধ টের পাচ্ছিলেন মুসলিমরা। তারপর খেয়াল করে দেখেন গ্রেনফেল টাওয়ারের একটি ফ্লোরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। দেরি না করে তাঁরা ডেকে তোলেন প্রতিবেশীদের। সেহরি খেতে ওঠা মুসলমানদের চিৎকার চেঁচামেচিতেই অনেকেরই ঘুম ভাঙে। ফলে তারা বেঁচে যান ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থেকে। গ্রেনফেল টাওয়ারে বসবাসকারী মুসলিমরা জানায়, ভোর রাতে সেহরি খেতে উঠে ধোঁয়ার গন্ধ পান। এরপর প্রতিবেশীদের দরজায় দরজায় গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন তাঁরা। এর মধ্যেই অনেক তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল অনেক ঘুমন্ত মানুষের বাসায় আগুন লেগে যায়। পরে অনেককে দড়ি ব্যবহার করে বের করে আনতে হয়। অগ্নিকাণ্ডের পর পরই উদ্ধার তৎপরতা চালানো অনেকের ভাষ্য, আগুন লাগার পর স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক ও এলার্ম কাজ করেনি। গ্রেনফেল টাওয়ারের আটতলার বাসিন্দা খালিদ সুলেমান জানান, তিনি সাধারণত বেশি রাত জাগেন না। কিন্তু ওই রাতে তিনি সেহরির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। খালিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘কোনো অগ্নি সতর্কতা ঘণ্টি বাজেনি। কেউ সতর্কও করেনি। আমি রেডিও চালু করে সেহরির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় ধোঁয়ার গন্ধ পাই।’ খালিদ আরো বলেন, ‘আমি আমার ঘরের জানালা খুলে বাইরে তাকাই। দেখি সাততলা থেকে ধোঁয়া উড়ছে। এরপর আমি আমার ফুফুকে ডেকে আশপাশের সব প্রতিবেশীকে ডেকে তুলি। দুই প্রতিবেশী ছাড়া বাকি সবাই দরজা খুলেছে। আমার পাশের বাসার লোকেরা একটু দ্রুতই ঘুমিয়ে যায়।’ শুধু ডেকে তুলে জীবন বাঁচানোই নয়, অগ্নিকাণ্ডের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছে মুসলিমরা। ভয়াবহ সে রাতে অনেক মুসলিম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও আল মানার মসজিদসহ অনেক মসজিদ খোলা ছিল। লন্ডনের কালচারাল হেরিটেজ কেন্দ্র তাদের ফেসবুক পেইজে লেখে, ‘গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাময়িক আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের জন্য আল মানার মসজিদ খোলা রাখা হয়েছে। যে কোনো ধর্মের যে কাউকে এখানে স্বাগতম। তারা চাইলে এখানে এসে খানিকটা বিশ্রাম ও ঘুম কিংবা একটু পানি ও খাবার গ্রহণ করতে পারেন।’ গ্রেনফেল টাওয়ারের এক বাসিন্দা বলেন, ‘যদি মুসলিম তরুণেরা আমাদের ডেকে না জাগাত আর মসজিদে আশ্রয় নিতে সাহায্য না করত তবে হতাহতের সংখ্যা আরো বেড়ে যেত। তারাই ব্যাগভর্তি পানি নিয়ে প্রথম সহায়তায় জন্য এগিয়ে আসে এবং মানুষকে দৌড়ে দৌড়ে জাগিয়ে দেয়।’ আন্দ্রে বারোস নামের ৩৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘মুসলিমরা অনেক মানুষকে বের করে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি দেখেছি সাহায্যকারীদের বেশির ভাগই ছিলো মুসলিম। এ ছাড়া তারা খাদ্য ও কাপড় দিয়েও সহায়তা করেছে।’