খেলা

সেমির স্বপ্ন ছুঁয়ে ‘ফাইনাল’ সমাধি

By Daily Satkhira

June 16, 2017

কোন কোন দিন করতে চাওয়ার কোনকিছুই ঠিকঠাক হয় না। মাশরাফিদের বোলিংয়ের অংশটা সেরকম হলেও ব্যাটিংয়ের চিত্র ছিল উল্টো। নিষ্কণ্টক হয়তো ছিল না, তবে সুযোগ ছিল সম্ভাবনাগুলো পাশাপাশি গেঁথে বিজয়মাল্যের ক্ষেত্র প্রস্তুতের। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে প্রথমে সেইসব সম্ভাবনার অপমৃত্যু, পরে বিবর্ণ বোলিং প্রদর্শনীতে ষোলোকলা পূর্ণ। শেষঅবধি স্বপ্ন ছোঁয়ার সেমিতে ভারতের বিপক্ষে ৯ উইকেটে ম্যাচ হাতছাড়া করে সমাধিত ফাইনালের প্রত্যাশা।

এজবাস্টনে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ২৬৫ রানের লক্ষ্য তেমন কিছুই নয়। শক্তিশালী লাইনআপের ভারতের সামনে তো নয়ই। তাদের চাপে রাখতে শুরুতেই তুলে নিতে হত উইকেট। অথচ প্রথম সাফল্যটি যখন এল, ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে ১৫টি ওভার, ভারতের রানও প্রায় একশর কাছাকাছি। মাশরাফির হাত ধরে টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার ধাওয়ানের বিদায়ে মিলল কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা। সেটিই শেষ, বাকি নয় উইকেট অক্ষত রেখে ফাইনালে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

আদতে প্রথম ইনিংসের পরই ম্যাচটা অর্ধেক হেরে বসে বাংলাদেশ। আবার নিভু নিভু হলেও খানিকটা প্রত্যাশাও ছিল। ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস তো বিরল নয়। কিন্তু টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারহীন বোলিংয়ের ধারাবাহিকতাই থাকল। বোলারদের সুযোগই দেননি দুই ভারতীয় ওপেনার। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর সহজ কাজটা বুঝি করতে নেমেছেন।

ইনফর্ম শেখর ধাওয়ানের ব্যাট বড় ইনিংসের আভাস দিয়ে থেমেছে ৪৬ রানে। টুর্নামেন্টে ৭৮, ১২৬, ৬৮-এর পর চার রানের জন্য ফিফটি হাতছাড়া। সেটিই এবারের আসরে সর্বোচ্চ রানের আসনটি ফিরিয়ে দিল ধাওয়ানকে। প্রথম ইনিংসে টপকে যাওয়া তামিম ইকবালকে (২৯৩) পুনরায় টপকে ধাওয়ানের এখন ৩১৭।

ধাওয়ানের ৮৭ রানের উদ্বোধনী জুটি সঙ্গী রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। হার না মানা ১২৩ রানের ইনিংস তার। ১৫ চার ও এক ছয়ে ১২৯ বলে সাজানো। আর আট হাজার রানের মাইলফলকে পা রাখা বিরাট কোহলির অবদান অপরাজিত ৯৬। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৭৮ জুটির পর ৫৯ বল হাতে রেখেই ম্যাচ পকেটে।

এর আগের গল্পটা সম্ভাবনা আর ছুঁড়ে আসার। শুরুর ধাক্কা সামলে যখন বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ, তখনই তালগোল পাকিয়ে ফেলার। তামিমের পর মুশফিক ও সাকিব দ্রুত ফিরে গেলে পথ হারায় টাইগাররা। সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি।

সৌম্য (০) ও সাব্বিরের (১৯) বিদায়ের পর মুশফিককে নিয়ে ১২৩ রান যোগ করে পথ দেখানোর কাজটা করেছিলেন তামিম। ৭০-এর ঘরে যখন ফিরলেন এই বাঁহাতি, তখনো ভদ্রস্থই দেখাচ্ছিল সংগ্রহটা। কেদার যাদভের বলে বোল্ড হয়ে ফেরা তামিম ৮২ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছে।

উইকেটে তখন থিঁতু হওয়া মুশফিকের সঙ্গী আগের ম্যাচে শতক করা সাকিব। কিন্তু তামিম ফেরার পর সাকিবও (১৫) দ্রুতই সাজঘরে হাঁটা দিলে বড় ধাক্কা খায় লাল-সবুজরা। মুশফিক তাকে অনুসরণ করলে সেটা তালগোলে পরিণত হয়। ফেরার আগে ৬১ রান এসেছে মুশফিকের ব্যাটে। ৪ চারে ৮৫ বলের ধীরস্থির ইনিংস তার।

গত ম্যাচে শতক করা মাহমুদউল্লাহ তখনো ছিলেন, সঙ্গী তরুণ মোসাদ্দেক। কিন্তু দুজনে ৩৪ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি। মাহমুদউল্লাহ ২১ রানে সাজঘরে ফেরার আগেই মোসাদ্দেক আউট (১৫)।

এরপরও সংগ্রহটা যে আড়াইশ পেরিয়ে গেছে তার কৃতিত্ব মাশরাফির। শেষ পর্যন্ত ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক। ২৫ বলের ইনিংসটি ৫ চারে সাজানো। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৩৫ রানের জুটি গড়া তাসকিন অপরাজিত ১১ রানে।

ভারতের তিন বোলার দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। ভুবনেশ্বর, বুমরাহ ও যাদভ। একটি উইকেট গেছে জাদেজার ঝুলিতে।

ফাইনালের স্বপ্ন হয়তো পূরণ হয়নি, তবে টুর্নামেন্টজুড়ে অর্জনের খাতায় যুক্ত হয়েছে অনেককিছুই। প্রথমবারের মত আইসিসির কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইলে খেলার কথা কল্পনা করাই একসময় ছিল বিলাসিতা, এখন সেটি বাস্তবতা। যে সিঁড়িতে হাঁটতে অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আরো খানিকটা পথ পেরিয়ে একদিন হয়তো ফাইনালের বাস্তবতাটাও যুক্ত হবে লাল-সবুজের পতাকা তলে, হয়তো তারও খানিকটা বেশি এগিয়ে শিরোপাটাও।