ক’দিন আগে লিখেছিলাম ‘ আমে দুধে মিশে যাবে , আঁটি বাগানে যাবে’। এতে অনেকের বিরাগভাজন হয়ে মহাবিপদে পড়েছি। কেউ বলছেন কারে বানালেন আঁটি? কারও কারও প্রশ্ন আপনার আম দুধ তো আরও ফারাক হয়ে গেলো। মিশলো কই। বৃহস্পতিবার এক ইফতার মাহফিলে যেয়ে আমাকে একজন খুব বড় মুখ করেই বললেন ‘ কই আপনার আম দুধ তো মিশলোই না’। আমি করজোড়ে মাফ চেয়েছি। বলেছি পুরনো কাল থেকে শুনে এসেছি এ কথা। এই জমানায় তা যদি ভুয়া হয়ে যায় তো আমার কি করার আছে। আমি একটি গল্প তাদের শুনাতে চাই। যারা শাস্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করেন তারা বলতে পারবেন যে রাক্ষসরাজ রাবণের মধ্যম ভ্রাতার নাম ছিল কুম্ভকর্ণ। তিনি প্রতি ছয় মাস একটানা ঘুমের পর মাত্র একদিনের জন্য জাগতেন। তিনি ছিলেন অতিশয় নিদ্রাপরায়ন ব্যক্তি। আমি যাদের বিরাগভাজন হয়েছি তাদের উদ্দেশ্যে বলি নিশ্চয়ই আম দুধ এখন কুম্ভকর্ণের চরিত্র ধারন করেছে। নিশ্চয়ই তাদের ঘুম ভাঙ্গবে একদিনের জন্য। সেদিনই হয়তো আমে দুধে মিশেল হয়ে যাবে। আমার মসলা সত্য বলে প্রমানিত হবে। এই আম দুধের মিশেল দেখতে চেয়ে আমি আরও এক ধাক্কার মুখে পড়েছি। কারন আগের লেখায় আমি বড় আশা করে বলেছিলাম ‘ আমরা আর একটি ইফতারের অপেক্ষায় থাকলাম। যে দিন আম দুধ মিশে যাবে , আর আঁটি যাবে বাগানে’। পবিত্র রমজান মাসে আমার এমন প্রত্যাশা নিশ্চয়ই খারাপ ছিল না। কিন্তু আমার প্রত্যাশায় বালি পড়েছে। আমার হাতে এখন দুটি ইফতারের দাওয়াত কার্ড রয়েছে। এর একটি হলো জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক দুই বারের সাংসদ এবং জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক জনাব মুনসুর আহমেদের। তিনি ইফতারির দাওয়াত দিয়েছেন। আমরা দাওয়াত কবুল করেছি। তারিখ ১৮ জুন রোববার। স্থান তুফান কনভেনশন সেন্টার, কামালনগর, সাতক্ষীরা। আরেকটি ইফতারের দাওয়াত পেয়েছি আমি। সেটি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। তার চিঠিতে একটি চমৎকার মেসেজ আছে। এতে লেখা রয়েছে ইফতার মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ। দেখে ভালোই লাগলো। ভাবলাম এই তো আম আর দুধ এক পাতে এসেই গেছে। এই মিশলো আরকি। কিন্তু আমার প্রত্যাশায় আবার কে যেনো বালি ছড়িয়ে দিলেন। হাতে পেলাম এক প্রেস রিলিজ। এতে যা লেখা রয়েছে তা পাঠকদের সামনে হুবহু তুলে ধরলাম। ‘বিশ্বস্থ সূত্রে জানতে পারলাম যে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখা আয়োজিত পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আগামী ২১ রমজান, ১৭ জুন, শনিবার শহরের কাটিয়াস্থ সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ চত্বরে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের উদ্যোগ নিয়ে দাওয়াত পত্র বিতরণ করা হচ্ছে। উক্ত দাওয়াত পত্রে সভাপতি হিসেবে আমার উপস্থিতির কথা লেখা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এ বিষয়ে আমার সাথে কোন আলোচনা করা হয়নি। এমনকি ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্র আমার নিকট আদৌ পৌছায়নি। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, সাতক্ষীরা জেলা শাখা আয়োজিত আমার স্বাক্ষরিত ইফতার মাহফিল ইতি পূর্বেই আহবান করা হয়েছে। যাহা আগামী ২২ রমজান, ১৮জুন সাতক্ষীরা শহরের তুফান কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। আমার অজান্তে যে ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্র বিতরণ করা হচ্ছে আমি তার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যাহারা বারবার জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ড করে যাচ্ছে, সেই চক্রটি আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, সাতক্ষীরা জেলা শাখা আমার স্বাক্ষরিত দাওয়াত পত্রানুযায়ী জেলা আওয়ামীলীগ ও এর সকল সহযোগি অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে ইফতার মাহফিলে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি’। আমাদের প্রিয় নেতা মুনসুর আহমেদের পাঠানো এই বিবৃতি দেখে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। একই দলের সাধারন সম্পাদক জনাব নজরুল ইসলাম বড় মুখ করে তার নেতা জনাব মুনসুর আহমেদকে তার আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সভাপতিত্ব করবার কথা উল্লেখ করেছিলেন। আর জনাব মুনসুর আহমেদ তা খন্ডন করে বলেছেন ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা’। বরং ১৮ তারিখে আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলে যোগদানের আমন্ত্রন জানিয়েছেন তিনি। প্রিয় পাঠক আমি এখন ধরা খেয়েছি। পবিত্র রমজানের সওগাত হচ্ছে ভ্রাতৃত রমজান আমাদের শেখায় আল্লাহর দরবারে নিজেকে সমর্পন করতে। এক দলের দুই ভাই আমি বলবো দুটি প্রস্ফুটিত গোলাপ । এই রমজানে তারা দুই দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছেন। যেনো কেউ কাউকে চিনছেন না। বাতাসে তারা দোলা খাচ্ছেন। আর বিড় বিড়য়ে কি যেনো বলছেন। কেনো ইফতারের টেবিলে এক সাথে বসে ইফতার করা যায় না। আমি ভুলে যাইনি যে তাদের কাছে কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অতীতের ভুল ভ্রান্তি পেছনে ফেলে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে দলের সাধারন সম্পাদক সেতুমন্ত্রি ওবায়দুল কাদের তাদেরকে ডেকে বসিয়ে এসব বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কেউই যেনো সাড়া দিচ্ছেন না। অথচ সেদিন তারা ঢাকায় বসে কোলাকুলি করেছেন। বুকে বুক মিলেয়ে বলেছেন তাদের পথ তাদের মত এক ও অভিন্ন। দুজনেই চোখের পানি ফেলেছেন। বলেছিলেন আর মুখ ফিরিয়ে থাকা নয়। কিন্তু বাড়ি ফিরে একি দেখছি আমরা । দুই নেতার মধ্যে কেনো এতো ফারাক। আমি এখনও অপেক্ষায় আছি। পবিত্র রমজানের আরও কয়েকটি দিন সামনে। নিশ্চয়ই আম দুধ এক জায়গায় এসে যাবে , এমন স্বপ্ন দেখতে আমার ভয় কিসের। কারণ আমাদের ভোট নিয়েছেন আপনারা। আমাদের দেওয়া ভোটে আপনারা হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। আমাদের প্রত্যাশায় কেনো তবে বালি পড়বে। আমার শেষ কথা কুম্ভকর্ণের নিদ্রা কিন্তু এখনও ভাঙ্গেনি। ছয় মাসের রজনী এখনও বাকি। বলে রাত জাগা পাখি। নিদ্রাপরায়ণ কুম্ভকর্ণ একটি দিনের জন্য হঠাৎ যে কোনো সময় জেগে উঠবেন। আমরা শুভ্র হাসিতে চেয়ে চেয়ে দেখবো আম আর দুধ মিশে গেছে। আঁটি বাগানে গেছে। বাপ দাদার আমলের সে কথা ভুল হতেই পারে না। —- সুভাষ চৌধুরী , সাতক্ষীরা ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট, দৈনিক যুগান্তর ও এনটিভি।