নিজস্ব প্রতিনিধি : শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সাবেক সভাপতি কর্তৃক দুইজন সহকারী অধ্যাপককে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি সশস্ত্র হামলা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করা সাবেক অধ্যক্ষ মো: ফজলুর রহমান(মোশা) দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে সীমাহীন দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, রেজুলেশন জালিয়াতি, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করে তোলে। তার এসব অপকর্মের কারণে মাউশি গত ০৫’ফ্রেব্রুয়ারি ১৭ তারিখের নির্দেশনা মোতাবেক তার এমপিও বন্ধ করেন।
অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ডজন খানেক শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে এমপিও ভুক্ত করিয়ে এবং অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ নিয়ে গভর্নিং বডির নেতৃবৃন্দ আলোচনায় বসেন। আলোচনায় দ্রুত সময়ের কলেজের পাওনা অর্থ কলেজ ফান্ডে জমা দেওয়ার ওয়াদা করেন সাবেক অধ্যক্ষ। পরবর্তীতে তিনি সে টাকা ফেরত না দিয়ে কৌশলে ২১’ জুন,২২ তারিখে কলেজের অদূরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার নাটক সাজান এবং শিক্ষক পর্ষদের সেক্রেটারি সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রহিম ও মনিরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে সন্দেহজনক এজাহার দায়ের করেন। ঘটনার এক মাস পূর্বে ১৩’মে,২২ তারিখে মো: গোলাম মোর্শেদ সভাপতি নিয়োগ প্রাপ্ত হন। সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক কর্মচারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তদন্তের ভিত্তিতে ৩১’জানুয়ারি,২৩ তারিখে সভাপতি হিসেবে গোলাম মোর্শেদের নাম পরিবর্তন করে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরাকে নিয়োগ দেন। এরপর গোলাম মোর্শেদ ০৬’ফেব্রুয়ারি২৩ তারিখে হাইকোর্ট থেকে ইউএনও’র সভাপতি পদ ‘স্টে’ করে চিঠি নিয়ে আসেন এবং পরদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বহিরাগত লোকজন নিয়ে কলেজ অফিসে প্রবেশ করে শিক্ষক পর্ষদের সেক্রেটারি আব্দুর রহিম, শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক তপন ঘোষকে অফিস কর্মচারী ইয়ারুল কে দিয়ে ডাকিয়ে নেন। তাদেরসহ শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি প্রদর্শন করে।
এ ঘটনার পর শিক্ষকরা যথাসময়ে স্বাভাবিকভাবে কলেজ ছুটির পর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে সাতানী করিডোর সংলগ্ন মাকা মেম্বরের ‘স’ মিলের নিকটে পৌছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা গোলাম মোর্শেদের দুই ছেলে সাঈদ ও রাকিনসহ দুই গ্রুপের ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী দা, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, লাঠি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিতে আমাদের দুজন সহকর্মী অধ্যাপক মো: আব্দুর রহিম, মো: শাহিদুজ্জামান (ফারুক)কে হত্যার হুমকি দিয়ে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। দুইজনের মাথায় থাকা হেলমেট ফেটে যায়। এসময় জামাকাপড় ধরে টেনে হেঁচড়ে তাদের কে ফেলে দিয়ে এলোপাথাড়ি রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। সন্ত্রাসীদের হামলায় শিক্ষকরা আর্তনাদ করতে থাকলে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে শিক্ষকদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। যদিও হাসপাতালে গেটে তাদের বাহিনী বাধাসৃষ্টি করে। বর্বরোচিত এই হামলায় আক্রান্ত আব্দুর রহিম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ৭৫। মামলার খবরে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে গোলাম মোর্শেদসহ তার সন্ত্রাসীরা বাহিনীর সদস্যরা। মামলা হলেও গ্রেফতার না হওয়ায় মামলা তুলে নিতে খুন জখমসহ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মোর্শেদ বাহিনীর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।’ শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল কালামসহ সকল শিক্ষকরা ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষার্থে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সকল শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।