ভারতীয় পোশাকে বাংলাদেশের ঈদের বাজার ছয়লাব। এমনকি হরেক নামের ও দামের ভারতীয় পোশাক এ দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। তবুও ভারতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ঈদের কেনাকাটা করছেন অনেকেই। ভারতে গিয়ে শপিংয়ের এ মনোভাব কেবল উচ্চবিত্তে নয়, মধ্যবিত্তকেও গ্রাস করেছে। প্রতিদিনই দেশের হাজার হাজার মানুষ ঈদ উপলক্ষে শপিং করতে ছুটছেন কলকাতার বিখ্যাত বিগ বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটের উদ্দেশ্যে। এবার ঈদের কেনাকাটায় দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশির ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
গত শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ঈদের শপিং করতে গিয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জের আরাফাত আবেদীন। তিনি প্রায় লক্ষাধিক টাকার শপিং করে দেশে ফিরেছেন মঙ্গলবার। দেশে ফিরে তিনি জানান, তিনি তার পরিবারকে খুশি করতে ভারতে গিয়েছিলেন ঈদের কেনাকাটা করতে। ‘ইন্ডিয়ার ট্যাগ লাগানো গিফট দেখলে পরিবারের সবাই খুশি হবে’ – এমন ধারণা থেকেই তিনি ঈদের শপিংয়ে কলকাতায় গিয়েছিলেন। তিনি সেখান থেকে নিজের বোন, বোনের স্বামী, বাবা-মা, বন্ধুদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করেছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের ঈদের বাজার অনেক বড়। এদেশেই নামি-দামি সব ধরণের পোশাক পাওয়া যায়। তবুও ঈদ আসলে মানুষ ছুটে যায় ভারতে বা সিঙ্গাপুরে।’ হেলাল উদ্দিন আরও জানান, গত রজমানের ঈদের শপিং করতে দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ভারতে গিয়েছিলেন। ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় হাই-কমিশন গত বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ ভিসা দিয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি মানুষ সেখানে কেনাকাটা করতে যাবে উল্লেখ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যেকে যদি সর্বনিম্ন এক হাজার ডলারের (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৭৮ হাজার টাকা) পণ্য কেনাকাটা করে তাহলে দেশ থেকে এবারের ঈদে এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা চলে যাবে। তবে অনেকে ভারতে গিয়ে দুই হাজার ডলার থেকে পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত কেনা-কাটা করছে। এই হিসাবে দেশ থেকে অর্থ চলে যাওয়া পরিমাণটা আরও বাড়বে।’ বাংলাদেশি সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল ভারত থেকে ঈদের কেনাকাটা করে ফিরেছেন সোমবার। তিনি জানান, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকাসহ এর আশপাশের মার্কেটগুলোতে বাংলাদেশি ক্রেতাদের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন, ‘ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন মাকের্টে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। কলকাতার ব্যবসয়ীদের ধারণা, এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় পঁচিশ হাজার বাংলাদেশি ক্রেতা আসছেন শুধু নিউ মার্কেট চত্বরে। ঈদের আগ মুহূর্তে এ সংখ্যা দেড় লাখ থেকে দু’লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। নিউমার্কেট এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে শুধুমাত্র ছেলে-মেয়েদের পোশাকের দোকানের সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। প্রত্যেক দোকানে ইতোমধ্যেই ঈদের কেনাকাটা জমে উঠছে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশি ক্রেতা ধরতে ভারতে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাজার। কলকাতার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা মীর্জা গালিব স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, বেলগাছিয়া, নিউমার্কেট, চিৎপুর, টালিগঞ্জ, এন্টালি, আনোয়ার শাহ রোড, রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুর, পার্ক স্ট্রিট, চিৎপুরের জাকারিয়া স্ট্রিট, ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ চত্বর এলাকায় ইতোমধ্যে ঈদের জমজমাট বিক্রি শুরু হয়েছে। এসব এলাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এর বাইরে ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট, শিয়ালদহ থেকে রাজাবাজার বা বেলগাছিয়া-পার্ক সার্কাস থেকে এন্টালি-খিদিরপুর এলাকাতেও ঈদের কেনাকাটার ধুম লেগেছে। কলকাতার বিখ্যাত বিগ বাজার, শ্রী লেদারস, খাদিম, সাউথ সিটি মল ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ঈদ উপলক্ষ্যে কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর বিশেষ ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে। ব্র্যান্ডের শপগুলো ছাড়াও বড় বাজার বা চায়না মার্কেট এলাকায় পাইকারি মূল্যে শাড়ি, থ্রিপিস, প্রসাধনী কিনছেন অনেকেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন মনে করেন, কেনাকাটা করতে অন্যদেশে যাওয়া তখনই বন্ধ হবে, যখন দেশেই মানসম্মত পণ্য পাওয়া যাবে প্রতিযোগিতামূলক দামে। তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে বিশ্বমানের অনেক কিছুই পাওয়া যায়। তবে এমন অনেক পণ্য হয়ত আছে যেগুলো দেশে পাওয়া যায় না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যারা যাচ্ছেন, তারা নিয়ম মেনেই যাচ্ছেন। ঈদ শপিংকে কেন্দ্র করে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে গেলেও কিছুই করার নেই। কারণ, কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে যে নীতিমালা আছে তারা তা মেনেই করছেন। এছাড়া দু’দেশের সীমান্ত হাট রয়েছে। সেখান থেকেও দু’দেশের মানুষ ইচ্ছেমতো বাজার করতে পারেন।