নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার তালায় কবি সিকান্দার আবু জাফরের জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষ্য টানা ২৩ দিনের আনন্দ মেলার নামে উঠাও বাচ্চা লটারি জমজমাট হয়ে উঠেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য। আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে রোজার আগে এই মেলা শেষ করা হবে। মেলার উদযাপন কমিটি থেকে মেলার মাঠ ক্রয়কারী বলছে সবাইকে ঘুষ দিয়ে মেলা চালাতে হচ্ছে। জানা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় চলছে সিকান্দার মেলা। মাস ব্যাপী এই মেলায় উঠাও বাচ্চা লটারি জমজমাট হয়ে উঠেছে, সাথে নগ্ন নৃত্য আর যাত্রাপালার গোপন কক্ষে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে হরহামেশে।
প্রতিদিন ১৫০/২০০ ইজিবাইক, ভ্যান লটারির কুপন বিক্রি করতে বের হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। লোভনীয় চটকতার রেকর্ডিং সাউন্ড বাজিয়ে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিটি গাড়ি ৪ থেকে ৫ হাজার টিকিট বিক্রি করছে।
প্রতিটি কুপনের মূল্য ২০ টাকা। আর প্রাইজ থাকছে নামীদামী মোটরসাইকেল।
এর আগে বিগত সময়ে এ র্যাফেল ড্রকে উঠাও বাচ্চা বলে পরিচিতি লাভ করলেও এখন কৌশলী হয়ে আগে থেকে গোপনে নির্দিষ্টি করে রাখা লোক দিয়ে ড্র পরিচালনা করছে। যার ফলে বিক্রিত কুপন আর প্রাইজ নিজেদের পাতানো এক অভিনব প্রতারণায় প্রতারিত হচ্ছে মানুষ। এভাবে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার লটারি কুপন বিক্রি হয়। যে কুপন বিক্রি বা র্যাফেল ড্র নিয়ে ওপেন সিক্রেট তার কোন বৈধতা বা অনুমোদন নেই। অননুমোদিত র্যাফেল ড্র-র পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে মাত্র ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার। আর মাত্র ২০ টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল পাওয়ার আসায় ভ্যানচালক, দিনমজুর গরীব অসহায় পরিবারের গৃহকতৃরা সঞ্চিত হাঁস-মুরগীর ডিম, চাউল ইত্যাদি বিক্রি করে প্রতিদিন জনপ্রতি কমপক্ষে ৫টি কুপন ক্রয় করছে। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের সহজ সরল মানুষেরা সর্বস্ব দিয়ে টিকিট কিনে প্রতিদিনই প্রতারিত হলেও প্রতারক চক্র রয়েছে বহাল তরিয়তে। সামনে রমজান অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের এই উর্দ্ধগতিতে আমজনতা লটারির কুপন কিনে সর্বশান্ত হচ্ছে। আর এই টাকার ভাগ পৌছে দিচ্ছে জেলা শিল্পকলা একাডেমী থেকে শুরু করে জেলার নীতি নির্ধারকদের কাছে। ফলে একদিকে র্যাফেল ড্র, অন্যদিকে যাত্রা ও সার্কাসের আড়ালে রমরমা জুয়া ও অসামাজিক কর্মকান্ড চলছে তো চলছে। রাত যত গভীর হয় মেলা প্রাঙ্গণে সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস করতে উঠতি বয়সের যুবকদের উৎফলিত করা হচ্ছে। যারই ধারাবাহিকতায় তালার আটারই এক লৌহমর্ষক ঘটনার জন্ম হয়েছে। যে ঘটনা সাধারণ মানুষ মুখে নিতেও ভয়ে গায়ের লোম শিউরে তুলছে। মেলায় গ্রামীন যাত্রাপালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা থাকলেও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে প্যান্ডেল করেই সীমাবদ্ধ রয়েছে কার্যক্রম। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় প্রতিরাতে প্রকাশ্যে জুয়া ও নৃত্য চলায় সচেতন অভিভাবক মহল চরম উদ্বিগ্ন।
সাতক্ষীরা শহরের রাজ্জাক পার্ক এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে সারা দেশ থেকে জুয়াড়িদের একত্রিত করে মানিক সিকদার নামের এক ব্যক্তি সবাইকে উৎকোচ দিয়ে মেলার নামে অপরাধ প্রবনতার সূত্র পরিচালনা করছে। মানিক সিকদারের মুঠোফোনে এপ্রতিবেদককে জানান, ২ শত ৫০ জন সাংবাদিক আর একটি ছাত্র সংঠনের ৩শ ছাত্র আছে তার সাথে।
এছাড়া ঘুষ দিয়ে তিনি মেলা চালাচ্ছেন। তবে জুয়া ও নৃত্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
র্যাফেল ড্র অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, কোন অনুমোদন নেই, মৌখিক অনুমোদন আছে। আপনারা যা খুশি তাই লেখেন! দুর্ধষ আন্তঃজেলা জুয়াড়ি চক্রের অন্যতম হোতা এই মানিক সিকদার। বয়স ৮০ ছুই ছুই। সাতক্ষীরা জেলার মাটিতে দীর্ঘ ধরে বিভিন্ন দেশীয় উৎসবকে পুঁজি করে জুয়া পরিচালনা করলেও তার টিকিট কেউ ছুতে পারে না। গত মাসে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে র্যাফেল ড্র পরিচালনা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
লোলুপ দৃষ্টি সব সময় খেটে খাওয়া দিনমজুর অসহায় মানুষের রক্ত পানি করা টাকাই যেন তার চুষে নেওয়া এক রাক্ষস। তালা থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, মেলা কমিটি অনুমতি নিয়ে মেলা চালাচ্ছে।
লটারি, জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য কিভাবে চলছে জানতে চাইলে বলেন তিনি ছুটিতে আছেন। এসে ব্যবস্থা নেবেন। আর রোজার আগে মেলা বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান।
এবিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিক বার বিং দিয়েছিল এই প্রতিবেদক।
তবে তালা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ফোন রিসিভ করেননি।