নিজস্ব প্রতিনিধি : যৌতুকের দাবিতকৃত টাকা ও সোনার গহননা না পেয়ে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামী মোস্তফা বিশ্বাসকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর দেড়টায় সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমজি আযম এক জনাকীর্ণ আদালতে এ আদেশ দেন। ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মোস্তফা বিশ্বাস(৪২) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার চাঁদকাটি গ্রামের আমজাদ বিশ্বাসের ছেলে। মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০০৮ সালে তালা উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুস সবুরের মেয়ে শিউলি খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার চাঁদকাটি গ্রামের আমজাদ বিশ্বাসের ছেলে মোস্তফা বিশ্বাসের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মোস্তফা বিশ্বাসকে যৌতুক হিসেবে ২০ হাজার টাকার মালামাল দেওয়া হয়। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই মোস্তফা ও তার বাবা আমজাদ বিশ্বাস বাপের বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা ও তিন ভরি সোনার গহনা আনার জন্য শিউলিকে চাপ সৃষ্টি করে। শিউলি বিষয়টি তার বাবাকে জানায়। বাপের বাড়ি থেকে টাকা ও সোনার গহনা আনতে না পারায় শিউলিকে নির্যাতন করতো স্বামী ও শ্বশুর। একপর্যায়ে শিউলি অসুস্থ পড়লে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান আব্দুস সবুর।
মামলার বিবরনে আরো জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই ভোরে মোস্তফা তার বাবা আমজাদ বিশ্বাসকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যায়। এরপরপরই আব্দুস সবুর জামাতা, বেহাই ও মেয়েকে বাড়িতে রেখে বিনেরপোতায় একজনের কাছে টাকা আনতে যান। ওই দিন সকাল ৮টার দিকে ভাই আব্দুল গফুর মোবাইল ফোনে আব্দুস সবুরকে জানান যে, শিউলিকে ঘরের মধ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর দরজায় শিকল তুলে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মোস্তফাকে আটক করেছে স্থানীয়রা। পুলিশ মোস্তফাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তবে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে শিউলিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আব্দুস সবুর বাদি হয়ে জামাতা মোস্তফা বিশ্বাস ও বেহাই আমজাদ বিশ্বাসের নাম উল্লেখ করে ২০০৯ সালের ৪ আগষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ১১(ক)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। ৫৪ ধারায় কারাগারে থাকা মোস্তফা বিশ্বাসকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার উপপরিদর্শক লুৎফর রহমান ২০০৯ সালের ১৬ অক্টোবর এজাহারভুক্ত বাবা ও ছেলের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার নথি ও ১০ জন সাক্ষীর জেলা এবং জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামী মোস্তফা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে স্ত্রী শিউলি খাতুনকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক এমজি আযম তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আমজাদ বিশ্বাসকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
রায় প্রদানকালে আসামী মোস্তফা বিশ্বাস ও তার বাবা আমজাদ বিশ্বাস কাঠগোড়ায় হাজির ছিলেন। তবে আদালতের রায় ঘোষণার পর আসামী মোস্তফা বিশ্বাস চিৎকার করে বলেন যে, তিনি ন্যয় বিচার পাননি। একইভাবে ন্যয় বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলেন মোস্তফা বিশ্বাসের চাচী হাসিনা বেগম ও বোন আসমা খাতুন। আসামীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. বশির আহম্মেদ। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. এসএম জহুরুল হায়দার বাবু।