শিক্ষা

প্রধান শিক্ষকের কুকর্মের ফিরিস্তি দিলেন শিক্ষিকা

By Daily Satkhira

June 18, 2017

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে হাতে-কলমে কাজ শেখানোর কথা বলে নারী সহকর্মীকে নিয়ে রিকশায় চেপে যাওয়ার পথে সেই নারীর গায়ে হাত দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে যৌন নির্যাতন করেছেন একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পরিস্থিতির আকস্মিকতায় প্রথমে হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেও পরে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন নির্যাতিতা নারী। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া এই শিক্ষকের নাম সরদার হেলাল উদ্দিন। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও গভর্নমেন্ট স্টাফ কোয়ার্টার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। সরদার হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করা ওই শিক্ষিকা জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ায় ক্ষমতা খাটিয়ে শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের অনেক কিছু করতে বাধ্য করেন। ওই শিক্ষিকা আরো বলেন, “গত মার্চ মাসের ২১ তারিখে স্কুলটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রধান শিক্ষকের অশালীন প্রস্তাব পেয়ে আসছিলেন তিনি। যেমন এই শিক্ষিকাকে ফোন করে সরদার হেলাল উদ্দিন বলতেন, ‘এই পোশাক ভালো না, চলো আমি তোমাকে পোশাক কিনে দেব, জুতা কিনে দেব। প্রায় দিনই সন্ধ্যায় সে আমাকে ফোন দিত। ফোন দিয়ে বলত তোমাকে নিয়ে বলধা গার্ডেনে যাব, হাতিরঝিলে যাব, পার্কে যাব। তোমাকে ফোন দিলে তুমি চলে এসো।” প্রধান শিক্ষকের ফোন দেখলেই আতঙ্কে থাকতেন বলেও জানান ওই নারী। ওই শিক্ষিকা বলেন, স্কুলটিতে যোগদানের সময় তিনি হিজাবসহ বোরকা পরতেন। কিন্তু স্কুলটিতে যোগদানের দিনই সরদার হেলাল উদ্দিন তাঁকে জানান, এই স্কুলে বোরকা পরা যাবে না। তখন তিনি খেয়াল করেন, স্কুলটির অন্য শিক্ষিকারাও বোরকা পরেন না। পরে তিনি বিষয়টি মেনে নেন এবং হিজাব-বোরকা ছাড়াই কাজ শুরু করেন। স্কুল ছুটি হওয়ার পর ওই প্রধান শিক্ষক তিনজন শিক্ষিকাকে অকারণে বসিয়ে রাখতেন বলেও অভিযোগ করেন ওই নারী। তিনি বলেন, ‘আমাকে কোনো কাজ ছাড়াই বসিয়ে রাখত। বলত, আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি, আমাকে দেখতে এমন লাগছে। আমি যতদূর সম্ভব ছুটির পর স্কুল থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। তাঁর আচরণ সম্পর্কে স্কুলের দুজন শিক্ষিকাকে অল্প অল্প কিছু বলেছিলাম।’

ওই নারী বলেন, ‘১৩ জুন সকাল ১০টার সময় প্রধান শিক্ষক সরদার হেলাল উদ্দিন আমাকে ফোন দিয়েছে। ফোন দিয়ে বলেছে তোমার টাকা জমা দেওয়ার বইটা নিয়ে বের হও, তোমাকে নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যাব। কাজ শেখানোর জন্য বোর্ডে কীভাবে এসে কাজ করতে হয় তা শিখে যাও। শিক্ষা বোর্ডে যাওয়ার পথে রিকশায় করে শিক্ষা বোর্ডে নিয়ে যায়। ’

তবে ফেরার পথে প্রধান শিক্ষক রিকশার হুড তুলে দেন জানিয়ে ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘আমি তাকে বলি স্যার হুড ওঠানোর দরকার নাই, আমি এভাবে বসতে পারছি না। রোদ নেই তবে কেন হুড উঠিয়ে দিচ্ছেন? রিকশায় কিছু দূর যাবার পর সে আমার সাথে…। অনেক বাজেভাবে অশালীন আচরণ করেছে। সে আমার মোবাইলটাও হাতে রাখতে দেয় নাই, আমাকে জোরে চেপে ধরে রেখেছে। এমন সব বাজে বাজে কাজ করছিল যা বলা অসম্ভব। এ সময় আমি লোকলজ্জার ভয়ে কিছুই বলতে পারছিলাম না। রিকশা থেকে নামার পর সে আমাকে বলে শুক্রবার আমাকে ফোন দিলে যেন আমি বের হই, সে আমাকে নিয়ে গাজীপুর যাবে। সেখানে গিয়ে তাঁর সাথে আমাকে সময় কাটাতে হবে। সে বলে ১৭ লক্ষ টাকা দিয়ে জায়গা কিনে দিবে আমাকে।’

রিকশা থেকে নেমে বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে মামলার সিদ্ধান্ত নেন ওই নারী। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে স্কুলের অনেক ছাত্রী বলেছে যে তার চরিত্র ভালো না। সব কিছু মিলিয়ে আমি ১৪ জুন মামলা দায়ের করেছি। এ সময় স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল আমার সাথে। পিটি করাতে গিয়ে মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া, পিঠে হাত দেওয়াসহ ক্লাস এর ভেতরেও সে অনেক খারাপ কাজ করেছে। অনেক শিক্ষার্থী এগুলো আমাকে বলেছে এবং অনেক শিক্ষার্থী এসব ঘটনার বিষয়ে থানাতেও অভিযোগ করেছে।’