সাতক্ষীরা

আশাশুনিতে পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে জিও বস্তা আত্মসাতের তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন

By daily satkhira

June 03, 2023

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়ায় ভাঙন রোধে প্রায় ৬০ হাজার জিও বস্তা ডাম্পিংয়ের প্রায় ৩৫ হাজার বস্তা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত, দায়ী বাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অসমাপ্ত বালু ভর্তি জিও বস্তা ডাম্পিংয়ের কাজ সম্পন্ন করার দাবিতে অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার ৩ জুন বিকেল ৫ টায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বেড়িবাধের উপর মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়েছে। নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত প্রতাপনগর ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের উদ্দোগে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ঘন্টাব্যাপী হওয়া এই মানববন্ধনে বিভিন্ন পেশোর মানুষ সংহতি প্রাকাশ করে বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা পাউবোর কাজের মান নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই কাজে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা গেছে। তার উপর জিও বস্তায় বালু ভরাট করার কথা থাকলেও অনেক বস্তায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। সঠিক স্থানে ডাম্পিং না করে শ্রমিকরা বস্তা কেটে নদীতে বালু ফেলে দিচ্ছে। বক্তারা বলেন, কাজের এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের সমন্বয়ে সৃষ্ট সিন্ডিকেট স্থানীয়দের উপর চড়াও হয়ে উঠে। এ সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দূর্নীতির করাণেই উপকূল জুড়ে মানুষের মাঝে দূর্ভোগ বিরাজ করছে। এই দূর্ভোগ থেকে বাঁচতে আমরা এখন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পানিউন্নয়ন বোর্ডের দায়ী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের লাগামহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে একাধিকবার আমাদের বসত ভিটা নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ বাসস্থানের মত মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রায় ৩৫ হাজার জিও বস্তা আত্মসাতের অভিযোগ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শহিদুল্লাহ সানা বলেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর পোল্ডার নং ৭/২ এর অধীন কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় নদী ভাঙন রোধে সর্বশেষ বরাদ্দকৃত ৭টি প্যাকেজে প্রায় ৬০ হাজার জিও বস্তা ডাম্পিংয়ের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার বস্তা ডাম্পিং করা হয়েছে। বাকি প্রায় ৩৫ হাজার বস্তা কোথায়? স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে পাউবো ও ঠিকাদারের কাছে কাজের ওয়ার্ক আউট ও কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। সামান্য নিম্নচাপের সৃষ্টি হলেই ভঙ্গুর বেড়িবাধ ভেঙে যাওয়া ও ওভার-ফ্লো হয়ে লবন পানিতে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ছাড়া তিনি দায়ীদের শাস্তি দাবি করে বলেন, বাংলাদেশে উন্নায়নের ধারাবাহিকতা চলছে।  প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত অর্থ যেসকল কর্মকর্তা ও ঠিকাদার আত্মসাৎ করে শেখ হাসিনা সরকার ও তার উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এবং অবিলম্বে কুড়িকাহুনিয়ায় বেড়িবাধের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসন সানা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ডাম্পিং কাজের ফিল্ড তদারককারী আছাদ ও কামরুজ্জামান (টুকু) এর শ্রমিকরা বালুভর্তি জিও বস্তা ডাম্পিং না করে বস্তা কেটে বালু নদীতে ফেলে বস্তা গায়েব করে ফেলেছে। স্থানীয়রা গত ১৯/০৪/২০২৩ তারিখে প্রায় ৫০ টি জিও বস্তা কাটা অবস্থায় শ্রমিকদেরকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। এঘটনার পর কোম্পানির লোকেরা কাজের যাবতীয় সরঞ্চাম গুটিয়ে কাজ হবে না ঘোষণা দিয়ে কাজের ফিল্ড থেকে চলে যায়।

স্থানীয় যুবক আব্দুল্লাহ পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এস.ও আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ৭টি প্যাকেজের কাজ শুরুর দিকে বালু ভর্তি বস্তা সেলাই করার পর ডাম্পিংয়ের জন্য লেবার সরদার ও স্থানীয়দের হিসেবে ৪৬৭০ টি বস্তা গণনা করা হয়। অথচ এস.ও আলমগীর কবির একই বস্তা গণনা করে ৫৩০২ টি লিপিবদ্ধ করে। গণনার এমন তারতম্যের বিষেয়ে জানতে চাইলে এস.ও আলমগীর কবির বলেন, আমরা কৈফিয়ত দিতে আসিনি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মামলা দিয়ে জেলে ভরে দিব।

এ ছাড়া বক্তারা তাদের বক্তব্যে স্থায়ী বেড়ি বাধ নির্মান, ভাঙনকুলে কনক্রিটের ব্লক ডাম্পিং, লবনাক্ততা হ্রাসে কার্যকরী উদ্দ্যেগ গ্রহণ, ফসলের নিরাপত্তা ও কৃষক বাঁচানোর দাবি করেন।

প্রতাপনগর ইউনিয়নবাসী আয়োজিত এই মানববন্ধনে ইউনিয়নের ইউপি সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, সুশিল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী, নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এ জনপদের নারী-শিশু সহ, কৃষক, জেলে, দিনমজুর ও স্থানীয় সকল ধর্ম ও শ্রেণিপেশার প্রায় তিনশতাধিক মানুষ নানা রকমের দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড ও ব্যানার হাতে অংশ নেন।