দুই দলের প্রথম দেখায় ব্যাটে-বলে সুবিধা করতে না পারা পাকিস্তান হেরেছিল বড় ব্যবধানে। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে নিয়েছে মধুর প্রতিশোধ। শিরোপাধারীদের বিধ্বস্ত করে প্রথমবারের মতো জিতেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা।
ফাইনালে ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ফখর জামান আর শেষের ঝড়ে মোহাম্মদ হাফিজ দলকে এনে দিয়েছিলেন বিশাল সংগ্রহ। জিততে রেকর্ড গড়তে হতো ভারতকে, অসাধারণ বোলিং করা মোহাম্মদ আমির, জুনায়েদ খান, হাসান আলিরা তার ধারে কাছে যেতে দেননি বিরাট কোহলির দলকে।
এক পেশে ফাইনালে উজ্জ্বীবিত পাকিস্তান জিতেছে ১৮০ রানে। ওয়ানডেতে রানের দিক থেকে চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। আগের সেরা ছিল ২০০৫ সালে দিল্লিতে ১৫৯ রানের জয়।
লন্ডনের ওভালে রোববার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রান করে পাকিস্তান। কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রান। ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে এটাই ভারতের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ রান। এর আগে দুইবার ৩২৯ রান করেছিল পাকিস্তান।
শিরোপা ধরে রাখতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া আর ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হতো ভারতকে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় লক্ষ্য ছোঁয়ার আশাও জাগাতে পারেনি। ৩০ ওভার ৩ বলে গুটিয়ে যায় ১৫৮ রানে।
চোট কাটিয়ে ফেরা বাঁহাতি পেসার আমির শুরুতেই কাঁপিয়ে দেন ভারতকে। লক্ষ্য তাড়ায় পথ দেখাতে দলটি তাকিয়ে ছিল ছন্দে থাকা টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের দিকে। তাদের দ্রুত বিদায় করে কাজটা ভীষণ কঠিন করে তুলেন আমির।
তৃতীয় বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রোহিত শর্মাকে। পরের ওভারে আমির শিকার আরও বড়। লক্ষ্য তাড়ার মাস্টার ব্যাটসম্যান কোহলিকে ফেরান মাত্র ৫ রানে। আগের বলেই ফিরতে পারতেন ভারতের অধিনায়ক, স্লিপে তার ক্যাচ জমাতে পারেননি আজহার আলি। পরের বলে ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় পয়েন্টে।
দুই সঙ্গী দ্রুত বিদায়ে সবে ডানা মেলতে শুরু করেছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শিখর ধাওয়ান। তাকে সরফরাজের গ্লাভসবন্দি করে ম্যাচ প্রায় মুঠোয় নিয়ে নেন আমির।
৩৩ রানে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো ভারত তাকিয়ে ছিল দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং ও মহেন্দ্র সিং ধোনির দিকে। দলের বিপদে ত্রাতা হতে পারেননি তারা।
লেগ স্পিনার শাদাব খানের বলে রিভিউ নিয়ে যুবরাজকে বিদায় করে পাকিস্তান। হাসান আলিকে উড়ানোর চেষ্টায় সীমানার কাছে ধরা পড়েন ধোনি। ১৮ বছর বয়সী লেগ স্পিনার শাদাবের দ্বিতীয় শিকার কেদার যাদব।
হার্দিক পান্ডিয়ার ছক্কা বৃষ্টিতে সপ্তম উইকেটে ৯.৩ ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা সঙ্গে গড়ে উঠে ৮০ রানের জুটি। পাকিস্তানের স্পিনারদের দিশেহারা করে দেওয়া পান্ডিয়া ফিরেন ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে। ক্ষোভ-হতাশা নিয়ে ফেরা অলরাউন্ডারের ৪৩ বলে খেলা ৭৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটি গড়া ৬টি ছক্কা ও ৪টি চারে।
এরপর আর বেশিদূর এগোয়নি ভারতের সংগ্রহ। মাত্র ৬ রানে দলটি হারায় শেষ ৪ উইকেট।
দুই পেসার আমির ও হাসান নেন তিনটি করে উইকেট। দুটি উইকেট শাদাবের।
এর আগে বোলারদের লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়ার পথে পাকিস্তানের শুরুটা ছিল সতর্ক। দুই ব্যাটসম্যানকে বেধে রেখেছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। তার ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে ডট ছিল ২৩টি। জাসপ্রিত বুমরাহর এলোমেলো বোলিংয়ের সঙ্গে ভাগ্যেরও খানিকটা সহায়তা পেয়েছিল পাকিস্তান।
৩ রানে ক্যাচ দিয়েও নো বুমরাহর ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে যান জামান। আজহার আলির সঙ্গে গড়েন ২৩ ওভারে ১২৮ রানের চমৎকার এক জুটি। দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার রবিন্দ্র জাদেজা ও রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে দুই জনে খেলেছেন খুব সহজে।
আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে এটাই পাকিস্তানের শতরানের প্রথম উদ্বোধনী জুটি। ১৯৯৬ সালে সাঈদ আনোয়ার, আমির সোহেলের ৮৪ ছিল আগের সেরা।
ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি। ৬টি চার আর একটি ছক্কায় ৫৯ রান করে ফিরেন আজহার। তার বিদায়ের পর রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন জামান।
দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমের সঙ্গে গড়েন ৭২ রানের দারুণ এক জুটি। ৬০ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করা জামান তিন অঙ্কে যান ৯২ বলে। শেষ পর্যন্ত ১০৬ বলে ফিরেন ১২টি চার আর তিনটি ছক্কায় ১১৪ রান করে। ওয়ানডেতে বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের এটাই প্রথম শতক।
শুরুতে আঁটসাঁট বোলিং করা ভুবনেশ্বরকে উড়ানোর চেষ্টায় ফিরেন শোয়েব মালিক। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া অনিয়মিত স্পিনার কেদার যাদবের এবার শিকার বাবর। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ফিরেন চারটি চারে ৪৬ রান করে।
পাকিস্তান ইনিংসের তখনও ৭.৩ ওভার বাকি। অবাক করে দিয়ে অধিনায়ক সরফরাজের জায়গায় ব্যাটিংয়ে আসেন ইমাদ ওয়াসিম। প্রমোশন পাওয়া এই অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে গড়েন ৭১ রানের জুটি।
৩৪ বলে অর্ধশতক পাওয়া হাফিজ অপরাজিত ৫৭ থাকেন রানে। ৩৭ বলে খেলা তার ঝড়ো ইনিংসটি গড়া ৪টি চার আর তিনটি ছক্কায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৪ (আজহার ৫৯, জামান ১১৪, বাবর ৪৬, মালিক ১২, হাফিজ ৫৭*, ওয়াসিম ২৫*; ভুবনেশ্বর ১/৪৪, বুমরাহ ০/৬৮, অশ্বিন ০/৭০, পান্ডিয়া ১/৫৩, জাদেজা ০/৬৭, কেদার ১/২৭)
ভারত: ৩০.৩ ওভারে ১৫৮ (রোহিত ০, ধাওয়ান ২১, কোহলি ৫, যুবরাজ ২২, ধোনি ৪, কেদার ৯, পান্ডিয়া ৭৬, জাদেজা ১৫, অশ্বিন ১, ভুবনেশ্বর ১*, বুমরাহ ১; আমির ৩/১৬, জুনায়েদ ১/২০, হাফিজ ০/১৩, হাসান ৩/১৯, শাদাব ২/৬০, ওয়াসিম ০/৩, জামান ০/২৫)
ফল: পাকিস্তান ১৮০ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ফখর জামান
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট: হাসান আলি