নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের বনজীবি মন্টু গাজী অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিক মিজানুর রহমানের এক দিনের রিমা- মঞ্জুর করা হয়েছে। সোমবার সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক মহিদুল ইসলাম মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আরিফুর রহমান ফারাজির সাত দিনের রিমা- আবেদন শুনানী শেষে সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে এ দিনের রিমা- মঞ্জুর করেন। রিমা- আবেদন শুনানীকালে আসাসামী রুহুল আমিন ও মিজানুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. আতাউর রহমান ও অ্যাড. খায়রুল বদিউজ্জামান বলেন, পহেলা এপ্রিল বুড়িগোয়ালিনি স্টেশন থকে পাস (অনুমতি) নিয়ে গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের মন্টু গাজীসহ নয়জন সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যান।
একইসাথে যাওয়া নয়জনের মধ্যে মন্টু গাজী ফিরে আসেননি এবং তাকে তালপট্টি এলাকা থেকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে বলে এলাকায় ফিরে অন্য আটজন মন্টুর স্ত্রী ছবুরন্নেছাসহ পরিবারের সদস্যদের জানায়। একপর্যায়ে ২৪ এপ্রিল ডুমুরিয়া এলাকা থেকে মন্টু গাজী নিখোঁজ হয়েছেন মর্মে তার বিমাতা ভাই আবুল হাসান ১০ মে শ্যামনগর থানায় ৫৬৭ নং সাধারণ ডায়েরী করেছেন। আবার তিনিই ডুমরিয়া গ্রামের রুহুল আমিনের বাড়ির পাশে নদী থেকে ট্রলারযোগে মন্টু গাজীকে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে ১৮ জুন আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় প্রতিপক্ষ নির্বাচিত ইউপি সদস্য আবিয়ার রহমান, তার কাছের লোক বলে পরিচিত সাংবাদিক মিজানুর রহমান, খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান, দাকোপের কুমারেশ রায়সহ ১১জনকে আসামী করা হয়েছে। আবুল হাসান মন্টু গাজীর বিমাতা ভাই হলেও আপন ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তার জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা শহরের মধুমল্লারডাঙি হলেও গ্রাম গাবুরা এলাকায় দেখানো হয়েছে। তাছাড়া রিমা- নেওয়ার আগে মন্টু গাজী বুড়িগোয়ালিনি থেকে পাস নিয়ে গিয়েছিলেন কিনা (সিল সহি মারা কপি দেখানো হয়) তা যাচাই করতে সুন্তরবনের সহকারি বণসংরক্ষক এর কাছে প্রতিবেদন চাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। তবে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ফারাজী ও আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ভিকটিম উদ্ধারে রিমা- প্রয়োজন বলে দাবি করেন।
মামলার বিবরনে জানা যায় গত ২৪ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে শ্যামনগরের ডুমুরিয়া গ্রামের সাবুত আলী গাজীর ছেলে মন্টু গাজীকে(৫২) ডুমুরিয়া গ্রামের রুহুল আমিনের বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় তার বিমাতা ভাই আবুল হাসান গত ১০ মে শ্যামনগর থানায় ৫৬৭ নং সাধারণ ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে স্ত্রী ছবিরুন্নেছা মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করলে আবুল হাসান বাদি হয়ে গত ১৮ জুন সাতক্ষীরার ৫নং আমলী আদালতে অপহরণ মামলা করেন। মামলায় রুহুল আমিন, ইউপি সদস্য আবিয়ার গাজী, সাংবাদিক মিজানুর রহমানসহ ১১জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্তি মুখ্য বিচারিক হাকিম মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। গত ২০ জুন শ্যামনগর থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় উপপরিদর্শক আরিফুর রহমান ফারাজীর উপর ন্যস্ত হয়। ২০ জুন নিজ নিজ বাড়ি থেকে নৌকার মাঝি রুহুল আমীন গাজী ও মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রবিবার বিকেলে ডুমুরিয়া গ্রামবাসি প্রতিবাদ সমাবেশ করে মিজানুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক আরিফুর রহমান ফারাজী জানান, সোমবার আদালত থেকে মিজানুরকে রিমা-ে থানায় নিয়ে যাবেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন আবার তাকে আদালতে পাঠাবেন।#