কেএম রেজাউল করিম : দেবহাটা “রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র” উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহি পর্যটন কেন্দ্র। ইছামতি নদীর তীরে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি এ ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি উপজেলার মানুষকে গর্বিত করে। উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টাউনশ্রীপুর এলাকায় ভারতের টাকী পৌরসভার বিপরীতে ইছামতি নদীর তীরে শীবনগর মৌজায় প্রায় ৫০ একর জমিতে এ বনটি তৈরি করা হয়েছে। এই পর্যটন কেন্দ্রর সার্বিক উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রটিতে অধিকাংশ সময়ে জেলা, উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পারিবারিক ভাবে বনভোজনের আয়োজন করা করা হয়। এই বনটিতে বহু প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। সুন্দরবনের আদলে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বৃক্ষের চারা এনে রোপন করে ব্যাপক বনের সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে ১০একর জমির বুকে রয়েছে “অনামিকা লেক”। এই লেকে রয়েছে শান বাধানো পাকা ঘাট। বিনোদন প্রিয়াসীদের জন্য রয়েছে বসারস্থান। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য কৃত্রিম বিভিন্ন প্রজাতীর পশুপাখি থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে স্থাপন সম্ভব হয়নি। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এটি পরিপূর্ণ বনে পরিণত হবে। উপজেলা পরিষদের সাধারণ সভায় এক সিদ্ধান্তে জানাগেছে, সভায় উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বনকে পরিপূর্ণ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া ম্যানগ্রোভ বনে যাওয়ার রাস্তা পাকা, টাউনশ্রীপুর থেকে নদী পথে বন পর্যন্ত যাওয়ার সুব্যবস্থা, সমগ্র বনটির উপভোগের জন্য বনের উপর দিয়ে ক্রেনের ব্যবস্থা, কৃত্রিম জীবজন্তুর ব্যবস্থা, বনের লেকে বোটের ব্যবস্থাসহ নানামুখী প্রস্তাবনা ও বাস্তাবায়নে সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে বনটির সৈন্দর্য বৃদ্ধি করতে ২রুম বিশিষ্ট ভবন, একটি টিকিট কাউন্টার, প্রবেশদার গেটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে, সাতক্ষীরা জেলার ইছামতি সীমান্তের ইছামতির তীরে গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দিত মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবনটির পরপর পরিধি বাড়ছে। ২০০৯ সালে দেবহাটার সুশিলগাতী এলাকার নদীর বেড়ি বাধ ভেঙে প্লাবিত হলে বাধ রক্ষায় ২০১০ সালে উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে বাধ রক্ষায় ও প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষার জন্য ১০একরের মত জায়গা জুড়ে তৈরি এই ম্যানগ্রোভ বন। বেশ কয়েক বছর যেতে যেতে বনের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর রক্ষা পায় আশে পাশের এলাকাবাসীরা। প্রতিবছরে উপজেলার ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ উপভোগ করতে আসে প্রকৃতির এই দৃশ্য। সেই সাথে রান্নাবান্না করে ধুমধাম চড়–ই ভাতিও করে। তাছাড়া শীতের প্রথম থেকে শুরু হয় পিকনিক উৎসব। কয়েক মাস ধরে চলতে থাকে উৎসবের আমেজ। সেই আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সকলের মাঝে। বর্তমান স্থানটিতে কোন প্রকার ফি দিতে না হওয়ায় স্্েরাতাবহ ইছামতির তীরে নিরিবিলি সময় কাটাতে আসেন বিনোদন প্রেমিরা। এখানে ঘুরতে আসা কয়েক জনের সাথে কথা বললে তারা জানায়, স্থানটি অনেক নিরিবিলি, মনোমুগ্ধকর হওয়ায় মাঝে মধ্যে আসি। সরকারি ভাবে যদি উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে ম্যানগ্রোভ বনের মর্যদা আরো বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে সরকার রাজস্ব পাবে। তাছাড়া দেবহাটার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। এদিকে, বর্তমান সময়ে বনের চারপাশ দিয়ে বেড়ি দিয়ে জোয়ারের পানি আটকিয়ে রেখে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে একদিকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘসময় ধরে পানি আটকে রাখায় জলাবদ্ধতায় ম্যানগ্রোভ বনের গাছের শিকড় পঁচতে শুরু করেছে। স্থানীয়দের দাবি সকল প্রকার চক্রান্ত বন্ধ করে একটি বিনোদন স্পট নির্মাণ করতে পারলে এই উপজেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতিতে ভরে উঠবে এবং সরকারের রাজস্ব তহবিল বৃদ্ধি পাবে।