এম. বেলাল হোসাইন/ হাসান হাদী : সাতক্ষীরা’র সড়ক যোগাযোগের মান উন্নত ও টেকসই করতে হবে। আঞ্চলিক সড়কের লোড নেয়ার যে ক্ষমতা সাতক্ষীরার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে তার চেয়ে বহুগুণ ভারি পণ্যবাহী যান চলাচল করে। সুতরাং, এসব রাস্তা সংস্কার করলেও বেশিদিন টেকে না। মানুষকে প্রতিনিয়িত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখন সময় এসেছে ভোমরা থেকে খুলনা এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে যশোর সড়কের মান উন্নত ও টেকসই করার। দৈনিক আজকের সাতক্ষীরার প্রতিষ্ঠাবার্ষীকির আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা আরও বলেন, সাতক্ষীরা এখন অপরা সম্ভাবনাময় এক জেলা। এই জেলার অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে শুধুমাত্র সড়ক সংস্কার করলেই চলবে না। বরং সড়কগুলোকে মহাসড়কের মত করে নির্মাণ করার দাবি জানানোর সময় এসেছে। এ জেলায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটনের বিকাশ এবং ভোমরা স্থলবন্দরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে হালকা মানের আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে টেকসই ও মানসম্পন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দিতে হবে। পাঠক নন্দিত দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা’র চতুর্দশ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন, দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা’র সম্পাদক মোঃ মহসিন হোসেন বাবলু। পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুমের পরিচালনায় সভায় অতিথি ছিলেন, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন পিপিএম (সেবা), জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এন এম মঈনুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্বাস সুদেব কুমার, সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খানু মিঠু, বিশিষ্ট সমাজসেবক ডা. আবুল কালাম বাবলা, দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জি এম নূর ইসলাম, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ইউনিটির আহবায়ক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহমেদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপ্পি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম. কামরুজ্জামান, সিনিয়র সাংবাদিক সেলিম রেজা মুকুল, ৭১ টিভি’র জেলা প্রতিনিধি বরুণ ব্যানার্জী। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা শহরের রাস্তাঘাট মানসম্পন্ন করতে না পারলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- অসমাপ্ত থেকে যাবে। সাতক্ষীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোর ভগ্নদশা নিয়ে তিনি নিজেও ব্রিবতবোধ করেন বলে জানান। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার শিক্ষা ব্যবস্থা এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার বিকল্প নাই। জেলার একাধিক কলেজ ও স্কুল ইতিমধ্যে সরকারি করা হয়েছে। সাংবাদিক-রাজনীতিক সকলেরই প্রয়োজনীয় শিক্ষা থাকা দরকার। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ, বাইপাস সড়ক, রেল লাইন, কপোতাক্ষ খননসহ জেলার সকল উন্নয়নের কথা ও অবনতির কথা সংবাদপত্রে প্রকাশ করতে হবে। সাতক্ষীরায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যদিও সাংবাদিকতা পেশা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। এ পেশায় যারা নিয়োজিত তারা সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সতাতা এবং সাহসিকতার সাথে সাংবাদিকতা করতে হিয়ে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুমকেও নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখে পড়তে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরাই পারে জাতিকে আশার আলো দেখাতে। এসময় তিনি দৈনিক আজকের সাতক্ষীরার উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করে সত্য প্রকাশে আপোষহীন থাকার আহ্বান জানান। পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন পিপিএম বলেন, সাতক্ষীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা তাই এখানকার রাস্তাঘাট আরও অনেক উন্নত ও মানসম্পন্ন করতে হবে। রাস্তার লোড ক্যাপাসিটি আরও বেশি বাড়াতে হবে। অপেক্ষাকৃত ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাস্তা না থাকলে রাস্তা টেকসই হবে না। সাতক্ষীরার থেকে সড়ক পথে সুন্দরবনের সবচেয়ে নিকটে যাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটনের বিকাশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, একটি সংবাদপত্র যারা প্রকাশ করেন, তাদের যে কত কষ্ট করতে হয় সেটি যারা করেন তারা জানেন। বিশেষ করে শব্দ চয়ন, বানান শুদ্ধকরণ, বাক্য গঠন যে কত কঠিন সেটা বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। রিপোর্টাররা যে সংবাদ পাঠান তা সারা রাত ধরে এডিট করে তারপর পত্রিকায় প্রকাশ করতে হয়। দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা সেদিক থেকে প্রশংসার দাবিদার। পত্রিকাটি সাতক্ষীরার জনমানুষের কথা বলে, সাতক্ষীরার আলো, বাতাস, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, ছাত্র-ছাত্রীদের তথা সকল মানুষের কথা বলে। তিনি আরো বলেন, পানি শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখে। যে শহরে পানি নাই সেখানে আলো নাই। কিন্তু সাতক্ষীরায় পানি থাকলেও শহর আলোকিত না। আমরা লেখনির মাধ্যমে সাতক্ষীরার উন্নয়ন চাই। আর এজন্য লেখনির মাধ্যমে সাতক্ষীরার উন্নয়ন করতে হবে। আজকের সাতক্ষীরা সকল সংবাদপত্রকে পেছনে ফেলে একদিন সাতক্ষীরায় শীর্ষস্থান দখল করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ এন এম মঈনুল ইসলাম বলেন, জনগণের জন্য তথ্য প্রকাশ করতে হবে। সঠিক লিখতে হবে। এক্ষেত্রে দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা তুলনামূলক এগিয়ে রয়েছেন। যে কারণে ইতোমধ্যে পত্রিকাটি আমজনতার মুখপাত্র হিসাবে স্থান পেয়েছে। অধ্যক্ষ সুদেব কুমার বলেন, লক্ষ্য ঠিক থাকলে সফলতা অবশ্যই আসবে। সুতরাং লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে। দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জি এম নূর ইসলাম বলেন, একটি পত্রিকা প্রকাশের পেছনে কত জনের হাতের থাকে একটি সামনে থেকে বোঝা যায় না। এতদিন ধরে আমরা স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে একজন ভালো সাংবাদিক তৈরি করতে পারিনি। তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ভালো সাংবাদিক তৈরি করতে পারলে পত্রিকার সুনাম বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সাতক্ষীরার সড়কের জরাজীর্ণ অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দাবি এখন জাতীয় সড়ক তৈরি। সড়ক জাতীয় হলে আর এত দ্রুত নষ্ট হবে না। তবে এ দাবি পূরণ না হওয়ার কারণ জেলায় নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে সাতক্ষীরা দেশের শীর্ষ দশটি জেলার একটি। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সাতক্ষীরার উন্নয়ন কাক্সিক্ষত মাত্রায় হচ্ছে না। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের ভোমরা স্থলবন্দর ও এর আশেপাশের রাস্তাগুলো নিয়ে আরও বেশি লিখতে হবে। ভোমরা বন্দরে সকল প্রকার পণ্য আমদানি-রপ্তারির ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করতে সাংবাদিকদের ক্ষুরধার লেখনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন, সংবাদপত্রকে আমি শিক্ষক মনে করি। এই সংবাদপত্র আমাদের শিক্ষা দেয়। সেকারণে সংবাদ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ভাষা ও শব্দ চয়ন জরুরি। যদিও স্থানীয় পত্রিকা গুলো অর্থ সংকটের কারণে হয়ত ইচ্ছে থাকলেও সঠিকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না। তারপরও যতদূর সম্ভব বানান, ভাষা ও শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। এদিক দিয়ে দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশে এগিয়ে। আগামীতে পত্রিকাটি পুরোপুরি নির্ভুলভাবে প্রকাশ করার আহ্বান জানান তিনি। মমতাজ আহমেদ বাপ্পি বলেন, সংবাদপত্র আছে বলেই আজো দেশ টিকে আছে। দুর্নীতিবাজরা আজো সংবাদপত্রকে ভয় পায়। তবে সংবাদপত্রকে অবশ্যই সত্য প্রকাশে আপোষহীণ হতে হবে। এম. কামরুজ্জামান বলেন, সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ, আর সাংবাদিকরা হলো জাতির বিবেক। সে কারণে সংবাদপত্র অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। একটি সংবাদ কিভাবে উপস্থাপন করতে হবে, শব্দ চয়ন কিভাবে করতে হবেÑ এসব বিষয় মাথায় রেখেই সংবাদ উপস্থাপন করতে হবে। সেদিক দিয়ে দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা অনেকটাই এগিয়ে। তিনি পত্রিকায় উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্যানেল মেয়র সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু, এডিশনাল পিপি এ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, জেলা পরিষদ সদস্য নূরুজ্জামান জামু, মাহফুজা খাতুন রুবি, আজকের সাতক্ষীরার সহ-সম্পাদক শেখ তোহিদুর রহমান ডাবলু, সিনিয়র সাংবাদিক সেলিম রেজা মুকুল, আসাদুজ্জামান, এম. শাহীন গোলদার, আব্দুল জলিল, মো. আমিনুর রশিদ, সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সচিব শেখ মুশফিকুর রহমান মিল্টন, হাসান হাদী, সাতক্ষীরা পৌর আ. লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশি, আমির হোসেন খান চৌধুরী, এম বেলাল হোসাইন, মাহাফিজুল ইসলাম আককাজ, খন্দকার আনিছুর রহমান, প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি হাসানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিবৃন্দ।v