নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সাতক্ষীরায় সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে মানববন্ধন ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৬ আগষ্ট) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে জেলা ৩৫ বাস্তবায়ন কমিটি মানববন্ধনটির আয়োজন করে।
সাতক্ষীরা জেলা ৩৫ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইকরামুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, খুলনা বিভাগীয় ৩৫ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য মো. আবুল খায়ের।
সাতক্ষীরা জেলা ৩৫ বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ কুমার রায়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা কমিটির সদস্য সিরাজুম মনিরা, মিলন মন্ডল, রাশেদ, বিপ্লব, বিশ্বনাথ সরকার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষিত চাকরি প্রার্থীরা বিগত প্রায় ১০ বছর যাবৎ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীতে সকল বয়সী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন থেকে ২ বছরের অধিক সময় নষ্ট হয়েছে। কোভিড মহামারির জন্য প্রায় সকল প্রকার চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি/পরীক্ষা বন্ধ ছিল। চরম বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই কম-বেশি সেশনজট রয়েছে, ফলে সেশন জটের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। যে প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জন করতে গড়ে ২৫-২৬ বছর সময় লাগে, সে সার্টিফিকেটের মেয়াদ কখনো ৪-৫ বছর হতে পারে না।
যে সকল শিক্ষার্থী গবেষণা বা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমন করে, সে সকল শিক্ষার্থী দেশে ফিরে আসার পর সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স থাকে না।
বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর, কোনো কোনো দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশেগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ভেদে চাকরিতে আবেদনের বয়স সীমা ৩৫-৪৫ বছর মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৩৫ বছর, নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদশে এবং পাকিস্তানেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর। এক্ষেত্রে অতিসম্প্রতি পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা যায়।
পৃথিবীর অনেক দেশ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর বা তার বেশি থাকার সত্ত্বেও করোনা মহামারির কারনে চাকুরিতে আবেদনের বয়সসীমা আরো ২-৩ বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে তা বাড়ানো হয়নি।
২০১১ সালে বর্তমান সরকার সরকারি চাকরি হতে অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি, যা একটি বৈষম্য। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশনে (বিসিএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে (বিজেএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর, সরকারি নার্সিং এ ৩৫ বছর এবং বেসরকারি স্কুল/কলেজে ৩৫ বছর, যা একটি বৈষম্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংস্থাগুলো তাদের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা সরকারি মানদন্ড অনুযায়ী ৩০ বছরকেই অনুসরণ করে। বাংলাদেশের জাতীয় যুব নীতিতে ১৮-৩৫ বছর বয়সীদের যুবক বলা হলেও ৩০ বছর হলেই তাদেরকে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩২ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীতকরণ করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ৭১ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি লিখিত ভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য সুপারিশ করলেও কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এর পাতা ৩২ এবং শিক্ষা দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি প্যারাতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, উল্লেখ্য তা এখনো বাস্তবায়ন হয় নি।
তাই লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রার্থীদের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছর করা হোক।
এছাড়া চাকরির আবেদন ফি সর্ব্বোচ ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে (১ম শ্রেণীতে ২০০ টাকা, ২য় শ্রেণীতে ১৫০ টাকা, ৩য় শ্রেণীতে ১০০ টাকা, ৪র্থ শ্রেণীতে ৫০ টাকা) প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকির উদ্যোগ নিতে হবে। একই তারিখে এক সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী, আইন অনুষদের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতি পিতা বঙ্গবন্ধু এর নামে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেৎ বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যুরাল নির্মাণসহ দাবির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে স্থান নির্ধারণের জন্য আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অথাৎ “বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লে” এর কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে পুনরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বাস্তবায়নের দাবিতে তাদের প্রতীকী সার্টিফিকেট ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানায় এবং পরে তারা একটি র্যালী বের করে। র্যালীটি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে যেয়ে শেষ হয়।