কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা : দেবহাটা উপজেলার সরকারী বেসরকারী বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এতে করে ভারপ্রাপ্তের ভারে পড়ে সার্বিক শিক্ষা কার্য্যক্রমের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানিক কার্য্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়ছে। এমনকি খোদ উপজেলা শিক্ষা অফিসার না থাকায় শিক্ষা অফিসও ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনেক পদ খালি থাকলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। যা দুই একজন আছেন তারাও আবার স্থানীয় হওয়ার কারনে কোনদিন অফিসে আসেন আবার কোনদিন আসেননা।একাধিক সূত্র ও প্রাপ্ত তথ্য মতে, উপজেলায় মোট ৩টি কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে সখিপুর সরকারী কেবিএ কলেজ ও দেবহাটা সদরের দেবহাটা কলেজ চলছে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত দিয়ে।
সরকারী নির্দেশনা ও বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা থাকার কারনে কলেজ দুটিতে বারবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বদল করা হয়। এছাড়া ইছামতি টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজও চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। এছাড়াও বিভিন্ন মাদ্রাসা, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। অচিরেই খালি হবে আরো কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের পদ। দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে ভারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানগনকে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে তারা ঠিকমতো ক্লাশও নিতে পারেননা। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে সুবর্নাবাদ সেন্ট্রাল হাইস্কুল ও শশাডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসা। সরকারি কেবিএ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, দেবহাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান ও ইছামতি টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আহসানুল সালেহীন, সুবর্নাবাদ সেন্ট্রাল হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তরুন কান্তি সরকার ও শশাডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার সাইদুর রহমান বলেন, ম্যানেজিং কমিটি কবে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ নিয়োগ দেবেন সেটি কমিটির ব্যাপার।
এবিষয়ে দেবহাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হামিদ বলেন, তিনি নতুন দেবহাটাতে যোগদান করেছেন। তাই এসব বিষয়ে বুঝতে বা জানতে একটু সময় লাগবে। এদিকে দেবহাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসের অবস্থা খুবই নাজুক। সূত্র মতে, সরকারী কাঠামো অনুযায়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষা অফিসার ১জন, সহকারী শিক্ষা অফিসার ২জন, ইউডি উচ্চমান সহকারী ১জন, সহকারী ইউডি ১জন, হিসাব সহকারী ১জন ও অফিস সহায়ক ১জনের পদ রয়েছে। কিন্তু উক্ত অফিসে শিক্ষা অফিসার নেই, ইউডি ও সহকারী ইউডি নেই, অফিস সহায়ক নেই। ফাতিমা সালমা নামে একজন হিসাব সহকারী আছেন। কিন্তু দেবহাটার পার্শ্ববর্তী টাউনশ্রীপুরে তার শ্বশুর বাড়ি হওয়াতে তিনি ঠিকমত অফিসে আসেননা। আবার যেদিন আসেন সেটাও সকাল ১১টার পরে।
এসকল বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার আজহার আলী বলেন, তিনি নিজেইতো ভারপ্রাপ্ত। তার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। তার দেয়া তথ্য মতে, উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৯ টি। এই ৫৯টি স্কুলের মত মধ্যে আটটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। সেগুলো হলো, ঈদগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রত্নেশ্বরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ নাজিরের ঘের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, টিকেট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবর্নাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুলিয়া সিদ্ধেশ্বরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিজলডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরবালিথা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিমুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এবিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ানুর রহমান বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেনা। যে সকল প্রতিষ্ঠানে এধরনের সমস্যা আছে সেগুলো বিধি মোতাবেক সমাধান করার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।