আসনভিত্তিক মনোনয়ন পাবেন একজন। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রত্যেক আসনে তিন জন করে প্রার্থী বাছাই করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা প্রত্যেক আসন থেকে তিন জন প্রার্থীর নাম বাছাই করার কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। এছাড়া দলের কতিপয় নেতাকেও এ কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। নেতাদের ভালো-মন্দ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যও আমলে নেওয়া হচ্ছে বাছাই প্রক্রিয়ায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। দলটির মনোনয়ন বোর্ডের দুজন সদস্য এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্যও দুই/তিন সেট প্রার্থী বাছাইয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো- আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে কোথাও প্রার্থীর ক্যারিশমা, আবার কোথাও দলের ক্যারিশমাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আসনে তিন জন প্রার্থী বাছাই করে রাখছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। সভাপতির ঘনিষ্ঠ এই নেতারা আরও জানান, আগামী নির্বাচনকে শেখ হাসিনা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া হচ্ছে- দলের নেতাকর্মীদের কাছে ‘গুড ইমেজ’ আছে কিনা, রাজনীতিক হিসেবে এলাকায় কতটা পরিচিত, সংগঠক হিসেবে কতটা দক্ষ, সততা, নিষ্ঠা, শিক্ষা ও দলের জন্যে ত্যাগ-তিতীক্ষা কেমন, এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।।
প্রত্যেক আসনে বাছাই করা এসব প্রার্থীর মধ্য থেকেই আগামী নির্বাচনে নৌকার টিকিট দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এরসঙ্গে তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকাও দেখা হবে। তৃণমূলের পাঠানো নামের সঙ্গে বাছাই করা তালিকার নামগুলো আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরপর চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন তিনি। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের তিন জন নেতা জানান, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাসহ একাধিক মাধ্যম জড়িত। একাধিক মাধ্যমে উঠে আসা ‘কমন’ নামগুলো সর্বাদিক গুরুত্ব পাবে।
এ প্রসঙ্গে জানাতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনও প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে বিভিন্ন ভাবে যাচাই-বাছাই করেন। এবার আগে থেকেই এ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন তিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এবার সবচেয়ে সেরা প্রার্থীদের হাতে নৌকার টিকিট তুলে দেবেন দলীয় সভাপতি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রার্থী বাছাই করার কাজ চলছে অনেক আগ থেকেই। বিভিন্ন সংস্থাসহ একাধিক মাধ্যমে এই বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গ্রহণযোগ্যরাই পাবেন আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন।’
দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘প্রার্থী যাছাই-বাছাই আওয়ামী লীগের রুটিন কাজ। তাই এ কাজগুলো নির্বাচন পর্যন্ত চলবে।’ তিনি বলেন, ‘আগামীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করি। তাই প্রস্তুতিও পরিকল্পনা মাফিক নেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে গত মঙ্গলবার (২০ জুন) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আওঢামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করছে। এর ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচনে এমপি মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই অগ্রহণযোগ্যদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না।