সাতক্ষীরা

শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রাণনাথকে গ্রেপ্তারের সাতক্ষীরায় দাবিতে মানববন্ধন

By daily satkhira

December 20, 2023

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় প্রগতি সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক প্রাণনাথ দাশ, চেয়ারম্যান ইতি রানী বিশ্বাস ও সম্পাদক বিশ্বনাথ দাশের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঞ্চয়কৃত একশত কোটির ও বেশি টাকা আত্মসাত করে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরা ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে প্রতারণার শিকার গ্রাহকেরা এই মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, গ্রাহক দিপংকর মন্ডল, অরুণ কুমার সরকার, আজগার আলী, মারুফা বেগম, দেবী গাইন, বিশ^নাথ দাস প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পুরাতন সাতক্ষীরার প্রাণনাথ দাশ ২০১২ সালে ১২১ নং সমবায় রেজিষ্ট্রেশন মূলে প্রগতি সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি খোলেন। সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বড় ভাই বিশ্বনাথ দাশকে নিযুক্ত করেন।লাখ প্রতি মাসিক দেড় হাজার টাকা মুনাফা ও ডিপিএস এ সঞ্চয়কৃত টাকা পাঁচ বছরে দিগুন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি চাকুরিজীবি থেকে খেটে খাওয়া কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের কাছ থেকে কয়েক বছরে শত কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে তিনি নিজের সম্প্রদায়ের বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবিদের পেনসন ও সঞ্চয়ের টাকাকেই টার্গেট করেন। এজন্য তিনি ওইসব বিশিষ্ঠজনেরা যে যে ধর্মের অনুসারী সেইসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেয়ে নিজেও তাদের অনুসারী সেজেছেন।

সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী তার প্রতি আকৃষ্ট করতে তিনি কখনো পরিবহন মালিক হয়ে বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির নেতা, জেলা মন্দির সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আবার কখনো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেকে জাহির করেছেন। প্রাণনাথ দাসের বিরুদ্ধে শুধু গ্রাহকদের টাকা প্রতারণা নয়, কোমলমতি নারীদের কাছ থেকে সোনার গহন্ াবিক্রি করে সেই টাকা তার প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় করিয়েছেন। আবার তাকে বেশি মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অন্যদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করিয়েছেন। এমনকি ২০১৩ সাল থেকে দীর্ঘ সময় জজ কোর্ট এলাকায় তার অফিসে পছন্দের নারীদের কাজ দেওয়ার নামে ও অধিক মুনাফা দেওয়ার নামে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, প্রাণনাথ দাশ সোনালী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার অবসরপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক শহরের মুন্সিপাড়ার বিমল কৃষ্ণ সানার কাছ থেকে ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মধ্য কাটিয়ার অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক ভূধর চন্দ্র সরকারের কাছ থেকে ৯৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, অবসরপ্রাপ্ত সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা উত্তর কাটিয়ার প্রশান্ত গাইনের কাছ থেকে ২৬ লাখ ৯ হাজার, সুলতানপুরের পিটিআই ইনসট্রাক্টর ত্রিদিব ঘোষের কাছ থেকে ৫৫ লাখ, উত্তর কাটিয়ার শঙ্কর রায় এর কাছ থেওেক ৫ লাখ, মুন্সিপাড়ার হিসাবরক্ষণ অফিসার মাধব চন্দ্র গাইনের কাছ থেকে ২৭ লাখ ২৭ হাজার, পুরাতন সাতক্ষীরার ব্যাংকার নিতাই ঘোষের কাছ থেকে ১৭ লাখসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। টাকা চাইতে গেলে প্রাণনাথ দাস টালবাহানা শুরু করার একপর্যায়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভূধর সরকারসহ শতাধিক ব্যক্তি চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, র‌্যাব- ৬ ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। এরপর প্রাণনাথ দাশ তার বিভিন্ন স্থানের জমি ও অফিসঘর বিক্রি করে দেন। অভিযোগপত্রে প্রাননাথ দাশ, তার ভাই বিশ্বনাথ দাশ ও স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস যাতে গ্রাহকদের বিপুল পরিমান টাকা বিদেশে পাঠিয়ে নিজেরা পালাতে না পারে সেজন্য তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার আবেদন করা হয়। এরপরও কতিপয় গ্রাহক টাকা পাওয়ার দাবিতে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রাণনাথের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ চলাকালে প্রাণনাথ দাশ অজ্ঞাত স্থানে থেকে জনৈক আওয়ামী লীগ নেতা তুহিনকে দিয়ে আন্দোলনকারিদের হুমকি দেন। মঙ্গলবার রাতে প্রাননাথ দাশ স্বপরিবারে ভারতে চলে গেছে এমন খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পক্ষ থেকে বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।#