কে এম রেজাউল করিম দেবহাটা : শীত মৌসুমে সব বয়সী পর্যটকদের মুগ্ধ করতে নতুন সাজে রূপ নিয়েছে দেবহাটা রূপসী ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবন। পরিপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্রের রূপ দিতে সব ধরনের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেও পানি, পর্যাপ্ত বসার স্থান, বিশ্রাম কক্ষ, সেমিনার রুম, রান্নার স্থান, ইন্টারনেট ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে এখানে।
তথ্য মতে, এক সময়ের উপজেলার শীবনগর এলাকায় নদী ভাঙ্গন রক্ষায় গড়ে তোলা বন এখন মানুষের বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়ে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সেই সাথে এই বিনোদন কেন্দ্রকে ঘিরে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে ইছামতি নদীর তীরে শিবনগর মৌজায় প্রায় ১৫০ একর জমি জুড়ে রয়েছে এ বিনোদন কেন্দ্রটি। এটি উপজেলার “রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র” নামে পরিচিত। ইছামতি নদীর তীরে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি এ ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি এখন উপজেলায় মানুষকে গর্বিত করে। এই পর্যটন কেন্দ্রর সার্বিক উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সহযোগীতা প্রদান করা হয়েছে।
পর্যটন কেন্দ্রটিতে অধিকাংশ সময়ে জেলা, উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পারিবারিকভাবে বনভোজনের আয়োজন করা করা হয়। এই বনটিতে বহু প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। সুন্দরবনের আদলে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বৃক্ষের চারা এনে রোপন করে ব্যাপক বনের সৃষ্টি করা হয়েছে। যার ফলে সহজে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
এখানে সুন্দরবনের কেওড়া, বাইন, গোলপাতা, কাঁকড়া, নিম, সুন্দরী, হরকচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ উদ্ভিদ রয়েছে। বনের পাশে ১০একর জমির বুকে রয়েছে “অনামিকা লেক”। এই লেকে রয়েছে শান বাধানো পাঁকা ঘাট। বিনোদন প্রিয়াসীদের জন্য রয়েছে বসারস্থান। ঘোড়ার পিঠে ওঠা ও ইঞ্জিন চালিত বোডে চড়ার সুযোগ। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য জীবন্ত ও কৃত্রিম বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি রাখা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং একটি আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। ম্যানগ্রোভ বনে যাওয়ার ২টি রাস্তার মধ্যে একটি পিচ ঢালা রাস্তা। অপরটি ডাবল হেয়ারিং বন রাস্তা রয়েছে। এছাড়া সমগ্র বনটির উপভোগের জন্য বনের ভিতর দিয়ে ট্রেইল ব্যবস্থা, বনের লেকে বোটের ব্যবস্থাসহ নানামূখি প্রস্তাবনা ও বাস্তাবায়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঘুরতে এসে রাত্রি যাপন সহ বিভিন্ন সুবিধা রাখা হয়েছে।
শীতের প্রথম থেকে শুরু হয় পিকনিক উৎসব। অনেকে এসে রান্নাবান্না করে ধুমধাম চড়–ই ভাতিও করেন অনেকে। কয়েক মাস ধরে চলতে থাকে উৎসবের আমেজ। বর্তমান স্থানটিতে প্রবেশ করতে হলে ২০টাকা মূল্যের ফি দিতে হয়। যার পুরো টাকা সরকারি রাজস্ব তহবিলে জমা হয় এবং কেন্দ্রটির উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়। স্থানটি ইছামতির নদীর তীরে নিরিবিলি হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এখানে সময় কাটাতে আসেন। তাছাড়া সুন্দরবনের সৌন্দর্য এবং বাংলাদেশের পাড় থেকে ভারত সীমান্ত উপভোগ করা যায়।
বিনোদন কেন্দ্রটির ম্যানেজার সোহেল রানা জানান, সার্বিক নিরাপত্তা ও সুন্দর পরিবেশ যাতে বজায় থাকে সে জন্য সর্বদা তৎপর আছি। এখানে ছুটির দিনে অসংখ্য মানুষ বেড়াতে আসেন। জায়গাটি নদীর তীরে হওয়ায় এখান থেকে টাকি পৌরসভা ও ভারতের দেখা যায়। পর্যটকদের সুবিধায় পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ, নামাজের ঘর, বাথরুম, পানির লাইন সব কিছু ব্যবস্থা কার হয়েছে। পিকনিকের জন্য স্পট আছে। দুরদুরন্ত থেকে মানুষ পিকনিক করতে আসে এখানে।
সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্তমান উপ-সচিব আ.ন.ম তরিকুল ইসলামের উদ্যোগে বনটি গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্তমান উপ-সচিব হাফিজ আল-আসাদ বনটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ব্যাপক উন্নয়ন করেন এবং কেন্দ্রটির বানিজ্যিক ভাবে গড়ে তোলেন। এরপর পর্যয়ক্রমে বিভিন্ন নির্বাহী অফিসারগন এটির উন্নয়ন করছেন।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসাদুজ্জামান জানান, সব বয়সী মানুষের উপযোগী বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সংযোগ ঘটানো হয়েছে। এখানে আসলে সুন্দরবনে যাওয়ার অনেকটাই স্বাদ মেটানো যাবে। নির্মল বাতাসে মনোমুগ্ধকর এই বনটিতে আসা এবং উপভোগ করার জন্য উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, বনটি নান্দনিকভাবে তৈরি করায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ আল-আসাদ জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। এদিকে, বিনোদন কেন্দ্রটি আগামীদিনে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের চাহিদা মিটিয়ে সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করেন উপজেলাবাসী।