আজ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হকের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এই দলের নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থাকলেও পরবর্তীকালে ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ১৯৫৫ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়।
১৯৫২ সালে মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে ’৫৪ সালের নির্বাচন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে এ দেশের মানুষ। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিদের হীন চক্রান্তের ফলে মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই ভেঙে দেওয়া হয় মন্ত্রিসভা। শুরু হয় লাগাতার গণতান্ত্রিক আন্দোলন। ’৬২-এর গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, ’৬৬-এর বাঙালি মুক্তি সনদ ৬ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিণত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে। তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় চক্রান্ত। দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তাঁকে গ্রেপ্তার করে সম্পন্ন করা হয় ফাঁসিতে ঝুলানোর যাবতীয় আয়োজন। কিন্তু বাঙালি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেতাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে। শেখ মুজিব অভিষিক্ত হন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে।
তারপর ’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ লাভ করে ইতিহাসের নজিরবিহীন সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তবু ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি পাকিস্তানিরা। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ’৭১ সালের ৭ মার্চ। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ঘোষণা, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তির সংগ্রামে। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখের মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধুর সরকার স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে এই সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নব-উদ্যমে সংগঠিত হন। তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা ১৯৯৬-এর সরকার গঠন করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ২০০৮ সালে পুনরায় সরকার গঠন করে ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে মধ্যম আয়ের সুখী-সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখান এবং ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর আলোকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনের ধারাবাহিকতায় বাংলার জনগণ বিশ্বাস করে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সে জন্য ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার দিবসটি বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল।
২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২৩ জুন সূর্য উদয়ে সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।
সকাল সাড়ে ৯টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি, এস এম কামাল হোসেন ও অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন উপস্থিত থাকবেন।
এ উপলক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৬৮ বছর পূর্তিতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।