নিজস্ব প্রতিনিধি : ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই সাতক্ষীরার সদরের কুচপুকুর গ্রামের ওজিয়ার মোড়লের ছেলে আনিছুর রহমানকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যশোর জেলার শার্শা থানাধীন বসতপুর গ্রামের একটি ফাঁকা মাঠে গুলি করে হত্যার পর ক্রসফায়ার দেওয়ার প্রচারের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহতের ভাই মকফুর রহমান বাদি হয়ে মঙ্গলাবার সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির , সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক শার্শা থানার বসতপুরের উপপরিদর্শক কবীর হোসেন মোল্লাসহ ৩৩ জনের নামে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল বাদির লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে (১৫৬(৩) ধারা মতে) এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে একজন সহকারি পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলার তদন্ত করানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় অন্য আসামীরা হলেন, সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের নেছার আলী সরদারের ছেলে রফিকুল ইসলাম, একই গ্রামের নেছার আলীর ছেলে রব্উিল ইসলাম, কুচপুকুর জামতলা গ্রামের নজরুল সরদারের ছেলে এনামুল হক পলাশ, ও রণি আহম্মেদ, দক্ষিণ দেবনগর গ্রামের নেছার আলীর ছেলে মুনসুর আলী ও হামজার আলী, ভবানীপুর গ্রামের নয়দা ওয়াজেদ আলীর ছেলে ফারুক হোসেন, বালিয়াডাঙা গ্রামের ওজিয়ার রহমানের ছেলে মাঝারুল ইসলাম, কাশেমপুর হাজামপাড়া মোড়ের জনাব আলীর ছেলে ইকরামুল, কাটিয়া বাজারের পাশে খোকনের ছেলে শেখ ফারুক হোসেন, পলাশপোলের বাঙ্গালের ছেলে খায়রুল বাসার পাপন, সুলতানপুরের কাজী আবুল খায়েরের ছেলে কাজী ফিরোজ হাসান, বাগানবাড়ি মাঝেরপাড়ার শেখ মুজিবর রহমানের ছেলে শেখ আনোয়ার হোসেন মিলন, পায়রাডাঙা গ্রামের রাজ্জাক সরদারের ছেলে শফিকুল ইসলাম, জিফুলবাড়ি(গোবরদাড়ি) গ্রামের ওজিয়ার রহমানের ছেলে জয়নুল আরা (লালু), ভাবনীপুর গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা নাজমুস সাকিব, একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের চেলে সামছুর রহমান (মেম্বর), আব্দুর রহিমের ছেলে শহীদুল ইসলাম, আড়–য়াখালি গ্রামের জামসেদ গাজীর ছেলে জাকির হোসেন, ও আব্দুর রকিব, মৃত সমছের সরদারের ছেলে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম, শহরের মুনজিতপুরের আব্দুল গফুরের ছেলে জাহাঙ্গীর ও মজিবর রহমান, বাঁশঘাটা গ্রামের অছের আলীর ছেলে আক্তার হোসেন, শিয়ালডাঙা গ্রামের হেকমত সরদারের ছেলে ইমন ওরফে পটল, আগরদাঁড়ি গ্রামের আহম্মাদ গাজীর ছেলে আব্দুল বারী গাজী, বাবুলিয়া গ্রামের মতি মাষ্টারের ছেলে মাষ্টার পলাশ, কলারোয়া উপজেলার ওফাপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক ও আশাশুনি উপজেলার কামালকাটি গ্রামের লুৎফর রহমান গাজীর ছেলে শাহাজাহান গাজী।
মামলার বিবরনে জানা যায়, কুচপুকুর গ্রামের ওজিয়ার রহমান মোড়লের ছেলে আনিসুর রহমানকে ২০১৪ সালের ১৮ জুলঅই রাত আটটার দিকে চারি পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুটি মাইক্রোবাসে করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে আসে। রাতে তাকে নির্যাতনের পর যশোরের শার্শা উপজেলার বসতপুর গ্রামের একটি ফাঁকা মাঠে বুকে ও পায়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়। পরদিন সকালে খবর পেয়ে সেখান থেকে লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরীর পর ওই লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়না তদন্তের জন্য যশোর জেনারল হাসপতালের মর্গে পাঠায়। ময়না তদন্ত শেষে আনিসুরের লাশ রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সাতক্ষীরা সদর থানায় এ ঘটনায় মামলা দিতে গেলে তা নেওয়া হয়নি।
ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলার বিলম্বের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. মশিউর রহমান ফারুক চারজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৩৩জনের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় এফআইআর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।#