এ যেন সেই আগের জার্মানি। নিজেদের অর্ধ থেকে খেলা গড়ে হঠাৎ গতি বাড়িয়ে আক্রমণ। মাঝমাঠে বারবার দিক পরিবর্তন। ক্যামেরুনের বিপক্ষে নবীনদের দিয়ে সেই খেলাটাই খেলালেন জোয়াকিম লো। ৩-১ গোলের জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি নিশ্চিত হয়েছে তার দলের। সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো। অন্য ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে সেমি নিশ্চিত হয়েছে চিলির। তাদের প্রতিপক্ষ পর্তুগাল।
জার্মানি এদিন একমাত্র স্ট্রাইকার টিমো ঋনারকে সামনে রেখে ৩-৬-১ ফর্মেশনে দল সাজায়। ক্যামেরুন আক্রমণাত্মক ফর্মেশন ৪-৩-৩ এ যায়।
আক্রমণভাগের বাঁ-দিক থেকে ড্রাক্সলার শুরু থেকে ক্যামেরুনের জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। ২১ এবং ২৮তম মিনিটে দারুণ দক্ষতায় বক্সের কাছে বল নিয়ে গেলেও টার্গেট ঠিক রাখতে পারেননি।
সময় যত বাড়তে থাকে, ক্যামেরুনও নিজেদের গুছিয়ে আক্রমণে উঠতে থাকে।
৪৩তম মিনিটে বাঁ-দিক থেকে ড্রাক্সলার প্লাটেনহার্ডটকে দারুণ একটি পাস দেন। ঋনারকে চোখে রেখে বিপজ্জনক নিচু ক্রস পাঠান তিনি। কিন্তু স্ট্রাইকার ঋনার অফসাইড হওয়ায় সুযোগটি লুফতে ব্যর্থ হন।
৪৫তম মিনিটে জার্মানিকে বাঁচিয়ে দেন বার্সার হয়ে খেলা গোলরক্ষক টের স্টেগেন। ক্যামেরুনের আঙ্গুইসা বক্সের ডান কোনা থেকে বলের নিচে টোকা দিয়ে ব্যাকপোস্টে বল রাখেন। স্টেগেন কোনমতে পাঞ্চ করে কর্নার বানিয়ে দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে, ৪৮তম মিনিটে গোলের দেখা পায় জার্মানি। ড্রাক্সলারের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় দিমিরবে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। মাঝমাঠের ঠিক উপরে বল পান ড্রাক্সলার। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে ডজ দিয়ে দেখার মতো ব্যাকপাসে মিডফিল্ডার কিরেম দিমিরবেকে বল ছাড়েন। দিমিরবে বল নিয়ে সামনে এসে জায়গা বানিয়ে গোলের ডানকোনা দিয়ে বক্সের বাইরে থেকেই জাল খুঁজে নেন।
৫৩ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে আরেকটি মাটিকামড়ানো পাস দেন ওই ড্রাক্সলার। স্ট্রাইকার টিমো ঋনার ফাঁকায় থেকে বল ধরেন। দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়ে যান। শটও নেন। কিন্তু ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারেননি।
পরের মিনিটে ঋনার আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করেন। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বিট করতে ব্যর্থ হন। পা দিয়ে কোনমতো বল দূরে ঠেলে দেন ক্যামেরুনের গোলরক্ষক। ফিরতি বল পান কিমিচ। তিনি শটও নেন। বার্সার রিজার্ভ গোলরক্ষক ওনডোয়া ডাইভ দিয়ে বল ক্লিয়ার করেন।
দল যখন একের পর কাউন্টার অ্যাটাকে দিশেহারা, তখন মাঝমাঠে সতেজতা আনতে ডোজুমকে উঠিয়ে নেন ক্যামেরুন কোচ ব্রুস। নাগামেলুকে স্মরণ করেন তিনি।
৬৪ মিনিটে মবৌকা লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। রেফারি প্রথমে ভুল করে সিয়ানিকে লাল কার্ড দেখান। ক্যামেরুনের খেলোয়াড়রা তর্ক জুড়ে দিলে মাঠের রেফারি রিভিউ নিয়ে ভিডিও পরখ করেন। সাইডলাইনের পাশে মনিটর দেখে তিনি নিশ্চিত হন ফাউল ছিল মবৌকার। পরে সিদ্ধান্ত বদল করে ‘আসল দোষী’কে মাঠ থেকে বের করে দেন। ১০ জনের ক্যামেরুন পরে লড়াই করেও ব্যবধান কমিয়ে রাখতে পারেনি।
ঠিক পরের মিনিটে ঋনার অতিমানবীয় এক হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এটি তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল। জার্মানির মিডফিল্ডার ই ক্যান লম্বা পাসে উইঙ্গার কিমিচকে বল দেন। কিমিচ ডান কোনায় ছিলেন। তখন বক্সের ভেতর ঋনারকে চোখে রেখে সুস্বাদু ক্রস পাঠান। এক ড্রপে বল আসে ঋনারের কাছে। রিসিভ করতে গেলে সময় নষ্ট হবে। আগুয়ান গোলরক্ষক তাতে বলে আসার সুযোগ পাবেন। সেই চিন্তা থেকে ঋনার ডাইভ দিয়ে হেড দেন। গোল!
মাঝমাঠে গতি আনতে ৭৩তম মিনিটে জোয়াকিম লো মিডফিল্ডার রুডিকে উঠিয়ে নেন। মাঠে আসেন আরেক মিডফিল্ডার বেঞ্জামিন হেনরিকস। লো এখানেই ক্ষান্ত দেন না। খেলার গতি বাড়াতে আক্রমণভাগে শক্তি বাড়ান। ৭৮তম মিনিটে মিডফিল্ডার দিমিরবেকে উঠিয়ে ফরওয়ার্ড ব্রানডটকে নামিয়ে দেন।
কয়েক সেকেন্ড বাদে ডিফেন্ডার নিকলাস সুলের ভুলে গোলহজম করতে হয় জার্মানিকে। পাতে আম্বৌকার তার সামনে থেকে হেড করে যান। অথচ তিনি বলে না যেয়ে হাত দিয়ে হালকা একটু ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করেন। ডিফেন্ডারের এহেন কাণ্ড দেখে স্টেগেন ক্ষোভ ঝাড়েন। ততক্ষণে বল জালে!
আক্রমণভাগে শক্তি বাড়িয়ে ফল পান লো। ব্রানডট দারুণ ড্রিবলিংয়ে বল বাড়ান আরেক বদলি খেলোয়াড় হেনরিকসকে। তিনি বল দেন বক্সের ভেতর অলস দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্রাইকার ঋনারকে। ঋনার রিসিভ না করেই গোলে বিদ্যুৎগতির শট নেন। হয়ে যায় তার দ্বিতীয় গোল।দুদলের ব্যবধান ৩-১!