বিএম আলাউদ্দীন আশাশুনি ব্যুরো: আশাশুনি উপজেলার গাজীপুর কুড়িগ্রাম ইসলামিয়া সিদ্দিকিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ ভাবে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার দুপুরে মাদ্রাসার সভাকক্ষে দু’পক্ষের উপস্থিতিতে তদন্ত পরিচালনা করেন আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আতিয়ার রহমান ও একাডেমিক সুপারভাইজার হাসানুজ্জামান।
এসময় মাদ্রাসার অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ও আব্দুল মালেক সহ ১০ জন অভিযোগকারী তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করেন। অভিযোগকারীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রমানাদি উপস্থাপন করলেও অভিযুক্ত অধ্যক্ষ কোন প্রমানাদি উপস্থাপন করতে পারেননি।
তদন্ত কার্যক্রম শেষে স্থানীয় শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ১০ জন অভিযোগকারী আঃ মালেক মল্লিক, কালামুজ্জামান, মাছুম বিল্লাহ, আতাউল্লাহ চৌধুরী, শহিদুল্লাহ, শামীম রেজা রাজু, মাগফুর রহমান, আলামিন ইসলাম, আঃ রাজ্জাক, সাইদুল ইসলাম লিটু সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর কুড়িগ্রাম ইসলামিয়া সিদ্দিকিয়া আলিম মাদরাসায় ২০১৮ সালে মিজানুর রহমান অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এরপর থেকে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে তিনি নিয়োগ বানিজ্য, এতিমদের টাকা আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে চলেছেন। কোন এতিম ছাত্র না থাকা স্বত্ত্বেও ৩২টি এতিম ছেলে দেখিয়ে ১৬ জন এতিমদের বরাদ্দকৃত সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্ডের ১১ লক্ষ ২০ হাজার ৮৪৭ টাকা আত্মসাৎ করেন। মাদরাসার ২৭ বিঘা জমির বার্ষিক আয় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার কোন হিসাব দেননি। মাদরাসায় এবতেদায়ী বিভাগে কোন শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও ৪ জন শিক্ষকের বেতন উত্তোলন করে বছরের পর বছর সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন। সরকারী নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী আলাউদ্দীন লাকীকে মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বানিয়ে তার মাধ্যমে প্রভাব খাঁটিয়ে অপকর্ম করে গেছেন এবং তথ্য গোপন করে মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসাবে তার আপন চাচা সপ্তম শ্রেণী পাস শফিকুল ইসলামকে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করে শিক্ষা বোর্ডে পাঠিয়েছেন। মাদরাসার শুন্য পদে একজন উপাধ্যক্ষ, একজন অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী, একজন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, একজন নিরাপত্তাকর্মী, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও একজন আয়া নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু করেন। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে স্বজন প্রীতির অভিযোগে তৎকালীন সংসদ সদস্য আ.ফ.ম রুহুল হকের হস্তক্ষেপে উক্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ তার মনোনীত প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সকল চাকুরী প্রার্থীদের না জানিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে নামমাত্র নিয়োগ পরীক্ষা দেখিয়ে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর বাদে অন্যান্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। যার মধ্যে নিজের ছেলে অহিদুর রহমানকে অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী ও তার আপন চাচাতো ভাই এর বউ আছিয়া খাতুনকে আয়া পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রাপ্ত অহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে চলমান জি, আর ২৪/২৪ (আশাঃ) মামলার শুনানিতে গত ২৮ অক্টোবর ধার্য তারিখে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন বাতিল করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। বাবা অধ্যক্ষ হওয়ায় তাকে সাসপেন্ড না করে স্বপদে বহাল রেখেছেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও জি, আর ৮/২৪ (আশাঃ), জি, আর-১৫০/২২ (আশাঃ) জি,আর-১৪৫/২২ (আশাঃ), জি, আর-৫৫/২২ (আশাঃ) মামলা চলমান আছে। অধ্যক্ষ অবশিষ্ট পদে নিজস্ব প্রার্থী না থাকায় কাউকে নিয়োগ না দিয়ে গত ৩০ অক্টোবর যুগেরবার্তা পত্রিকায় পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি ১৫ লক্ষ টাকা চুক্তিতে আত্মীয় রফিকুল ইসলামকে নিয়োগ দিবেন বলে জানা গেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগের বিষয়গুলো একদিনে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। প্রাথমিক তদন্তে বাদীপক্ষ অভিযোগের স্বপক্ষে যুক্তি ও প্রমাণাদি দাখিল করেছেন। অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান তদন্তের সময় স্বপক্ষে কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই তাকে ৪ দিনের মধ্যে স্বপক্ষের কাগজপত্রসহ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে। বাদী পক্ষকেও তাদের অভিযোগের স্বপক্ষে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের কাছে এ ব্যাপারে কিছু জানার চেষ্টা করা হলে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে সুকৌশলে তদন্ত স্থল পরিত্যাগ করেন।