বারাক ওবামার শেষ বছরে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন বিশ্বের ৬৪ শতাংশ মানুষ। তারা মনে করেন বিশ্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক ভূমিকা পালনে সচেষ্ট ছিলেন ওবামা। জরিপটি আভাস দিয়েছে, ইরাক আগ্রাসন নিয়ে অনেক দেশেই জর্জ বুশের জনপ্রিয়তায় যে পরিমাণ ধস নেমেছিল, ট্রাম্পের অবস্থান এখন তার থেকেও নিচে। দুই-তৃতীয়াংশ ট্রাম্পকে ‘একগুঁয়ে ও বিপদজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
পিউ রিসার্চ সেন্টার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বের সামাজিক বিষয়ে জনমত সম্পর্কে জরিপ করে ও ধারণা দেয়। নানান ধরণের সামাজিক, ভৌগলিক আর ব্যক্তি মতামত নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণালব্ধ তথ্য আর উপাত্তকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।
ট্রাম্পের প্রতি আস্থা রাখা বড় দুটি দেশ হচ্ছে ইসরায়েল ও রাশিয়া। লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা খুবই কম। লাতিন আমেরিকায় মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষের তার উপর আস্থা রয়েছে আর ইউরোপে সেই সংখ্যা ১৮ শতাংশ। মেক্সিকো ও স্পেনে এই সংখ্যা আরও কম। সেখানে যথাক্রমে ৫ ও ৭ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পের উপর আস্থাশীল।
জরিপে আরও দেখা যায়, ব্যক্তি ট্রাম্পকে অপছন্দ করেন সারাবিশ্বের মানুষ। অনেকেই তাকে একগুঁয়ে ও বিপদজনক মনে করেন। খুবই অল্পসংখ্যক মানুষ তাকে যোগ্য মনে করেন। ৬ শতাংশ জার্মান মনে করেন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য, ১৩ শতাংশ মনে করেন তিনি সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন আর ৯১ শতাংশ তাকে একগুঁয়ে মনে করেন। ৮১ শতাংশ মনে করে ট্রাম্প অসহিষ্ণু ও ৭৬ শতাংশ তাকে বিপদজনক মনে করে। যুক্তরাজ্যে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৮৯, ৭৭ ও ৬৯ শতাংশ। বৈশ্বিকভাবে ৬৫ শতাংশ মানুষ তাকে অসহিষ্ণু ও ৬২ শতাংশ তাকে বিপদজনক মনে করে।
ট্রাম্পের নীতিগুলোও অপছন্দ অনেকের। মেক্সিকান সীমান্তে দেয়াল, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসা ও মুসলিম প্রধান কয়েকটি দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও পছন্দ করেননি অনেকে। সামনের মাসেই জার্মানিতে বসছে জি২০ সম্মেলন। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের পিছুটানের বিষয়টি সমর্থন করেছে মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ। বৈশ্বিকভাবে এই সংখ্যা মাত্র ১৯ শতাংশ।
৮০-এর দশকে চালু হওয়া নব্য উদারবাদী অর্থব্যবস্থা যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে ব্যর্থতার নজির স্থাপন করেছে, ঠিক তখনই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নামের সংরক্ষণশীল অর্থনীতির রূপরেখা নিয়ে মার্কিন রাজনীতির মঞ্চে হাজির হন আবাসন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভয়াবহ বৈষম্য উৎপাদনকারী নব্য উদারবাদের জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তবাজারের অসারতা প্রমাণ করতে সমর্থ হন তিনি। আর সে কারণেই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যমুক্তির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন আমেরিকানরা। আর ওই নীতিতে শ্বেতাঙ্গ দরিদ্র আমেরিকানদের আস্থার কারণেই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে সমর্থ হন। তবে বিশ্ববাসীর কাছে ট্রাম্পকে জনপ্রিয় করতে পারেনি তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতি। বরং এই নীতির সাপেক্ষে তার মুসলিম নিষেধাজ্ঞা ্ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়াসকে নেতিবাচক চোখে দেখেছে বিশ্ববাসী। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’কে কোনোভাবেই নব্য উদারবাদী অর্থ ব্যবস্থার রিপ্লেসমেন্ট ভাবতে পারছেন না অর্থনীতিবিদেরা। তাদের মতে, এই অর্থব্যবস্থার কোনও গন্তব্যই নেই। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুপক্ষীয় সম্পর্কের চেয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে, তখন বিশ্বের অনেক দেশই নিজ-নিজ স্বার্থ সংরক্ষণে সম্পর্কের নতুন সমীকরণ আর নতুন জোট গঠনের চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বিপন্নতা তৈরি করেছে, তা পুরনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বদলে দিচ্ছে বলেও আভাস মিলেছে। আভাস মিলেছে বিশ্ববাণিজ্যে একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনারও।