ডেস্ক রিপোর্ট: হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সাতক্ষীরা শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী “প্রাণশায়ের খাল” দখল ও দূষণ থেকে পুনরুদ্ধার ও রক্ষার ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় কেন তা অসাংবিধানিক, বেআইনী, ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন। জারিকৃত এ রুলে উল্লেখিত খালটির মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণের, সকল দখলদার ও ক্ষতিকর স্থাপনা উচ্ছেদের এবং দূষণের উৎস চিহ্নিতপূর্বক দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উল্লেখিত খাল পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও রক্ষা করার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি আদালত উল্লেখিত খালটির মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারনের, খালে বিদ্যমান দখলদার উচ্ছেদের এবং খালটি দূষণের উৎস চিহ্নিতপূর্বক দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেইসাথে আদালতের আদেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আদালত অন্তবর্তীকালীন এ নির্দেশসমূহ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর মহাপরিচালক, সাতক্ষীরা জেলার জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালনা ও রক্ষাবেক্ষণ) এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, সাতক্ষীরার উপ-পরিচালককে প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ৪৪৬/২০২৫) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে ২৪ ফেব্রæয়ারি সোমবার বিচারপতি মো: আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি রাশেদুজ্জামান রাজা এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা শহর এলাকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে প্রাণশায়ের খাল। সাতক্ষীরার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর সংযোগকারী এ খালের দৈর্ঘ্য ১৩ কিলোমিটার। শহরের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে- এ খাল। বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ খাল হিসেবে, এ খালের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। একসময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এ খালের অবদান ছিল অপরিসীম। দেশের অন্যান্য নদী-খালের মতো দখল ও দূষণে এ খালের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। খালটি দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান, ঘর-বাড়ীসহ নানা অবৈধ স্থাপনা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরা ২০১৯ সালে ৮২০ জন অবৈধ দখলদার এবং ১৬৮ টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করলেও অদ্যাবধি দখলমুক্ত হয়নি প্রাণশায়ের খাল। দখলের পাশাপাশি খালটির দু‘পাশে এবং খালের মধ্যে পলিথিন-প্লাষ্টিকসহ নানান অপচনশীল ও ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলে খালটির পানি দূষিত করছে। সাতক্ষীরা বাজারের অননুমোদিত কসাইখানার মাধ্যমে গবাদি পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য সরাসরি খালটিতে ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও বাজার ও পাশর্^বর্তী আবাসিক এলাকার ড্রেনের সংযোগ রয়েছে এ খালে। গৃহস্থালী বর্জ্য নিয়মিত এ খালে ফেলা হচ্ছে। ফলশ্রæতিতে খালটি তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট হারিয়ে একটি পঁচা ডোবায় পরিণত হয়েছে। খালটি রক্ষায় বেলা উল্লেখিত জনস্বার্থমূলক মামলাটি দায়ের করে। মামলার বিবাদীগণ হলেন – ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; সাতক্ষীরা জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার; খুলনা বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক; সাতক্ষীরা সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা; সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক; সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালনা ও রক্ষাবেক্ষণ) এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক। বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড: মো: গোলাম রহমান ভুঁইয়া।