আন্তর্জাতিক

মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে নাগরিক বিক্ষোভ

By Daily Satkhira

June 30, 2017

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে একের পর এক মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সেদেশের নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ বিক্ষোভে নেমেছিলেন। একটি বেসরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ২০১৫ থেকে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৩টি এধরণের ঘটনা হয়েছে, যেখানে মুসলমান কোনও ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে মারধর করা হয়েছে। গত তিনমাসে এধরণের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬জন মুসলমানের। এধরণের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধেই দিল্লিসহ ভারতের নানা জায়গাতেই সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিয়ে ‘নট ইন মাই নেম’ নাম দিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে কলকাতাতেও। দক্ষিণ কলকাতার একটি খোলামেলা বিপনি বিতান চত্বরে কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন শুধুমাত্র একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা ফেসবুক পোস্ট দেখে। ‘নট ইন মাই নেম’ হ্যাশ ট্যাগও চালু হয়েছে মুসলমানদের চিহ্নিত করে গণপিটুনির ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে। কলকাতায় যাঁরা এই প্রতিবাদ সমাবেশের উদ্যোগটা নিয়েছিলেন, তাঁদেরই অন্যতম অঞ্চিতা ঘটক বলছিলেন, “চতুর্দিকে যেসব ঘটনা হচ্ছে, তাতে সত্যিই আমরা বিচলিত। আমাদের মনে হচ্ছে দেশে হিন্দুত্বের একটা আগ্রাসন শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে খুবই উগ্র জাতীয়তাবাদও তৈরি করা হচ্ছে, যার সঙ্গে আবার হিন্দু ধর্মকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।” কলেজ শিক্ষক সম্রাট সেনগুপ্ত বলছিলেন কেন তাঁর মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মুসলমানদের চিহ্নিত করে গণপিটুনি দিয়ে আহত – এমনকি মেরে ফেলার ঘটনাও খুব বেশী ঘটতে শুরু করেছে। “একটা শ্রেণীর মানুষের হাতে একরকম ক্ষমতায়ন হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রচন্ড শক্তিশালী মুসলিম বিদ্বেষ আগে থেকেই ছিল। কেন্দ্রে যে দল এখন ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের বলে বলীয়ান হয়ে ওই শ্রেণীর মানুষ নিজেদের বিদ্বেষটাকে উগরে দিতে শুরু করেছে,” বলছিলেন মি. সেনগুপ্ত। সমাবেশে প্রগতিশীল লেখক-বুদ্ধিজীবি, কবি, গায়ক, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই হাজির ছিলেন কলকাতার বেশ কিছু মুসলমান যুবক। তাদেরই একজন মুহম্মদ রাফে সিদ্দিকির কাছে জানতে চেয়েছিলাম সম্প্রতি মুসলমানদের পিটিয়ে মারার যেসব ঘটনা হচ্ছে ভারতে, তাতে তাঁরা কতটা আতঙ্কিত। মি. সিদ্দিকির কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে অন্তত আমাদের সেই ভয়টা নেই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশে আত্মীয়-বন্ধুদের কাছ থেকে যা খবর পাই, তাতে ওরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। গোরক্ষার নাম করে হোক বা অন্য যে কোনও নামেই, কেন্দ্রীয় সরকারের তো দায়িত্ব এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার। এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না, এটা আনএক্সেপ্টেবল।” ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে গতকাল যে নাগরিক প্রতিবাদ হয়েছে, কলকাতার সমাবেশের খবরও সামাজিক মাধ্যম দিয়েই ছড়িয়েছিল প্রথমে। আইনজীবি অধিরাজ রায় ফেসবুকের একটি পোস্ট দেখেই প্রতিবাদে যোগ দিতে এসেছিলেন। তিনি বলছিলেন, “এরকম একটা নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক জমায়েতের খুব দরকার ছিল, যেখানে কোনও রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক ব্যানার ছাড়া সমাজের নানা মানুষ এক জায়গায় জড়ো হবেন, একটাই দাবী নিয়ে, একটাই বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে। সেদিক থেকে এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল উদ্যোগ।” ঘটনাচক্রে, প্রতিবাদ সমাবেশগুলি কোনও রাজনৈতিক অথবা অরাজনৈতিক সংগঠন আয়োজন করে নি। কোথাও কোনও সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যানার পোস্টারও ছিল না – একটাই কথা প্রতিবাদে সামিল সকলের বুকে ঝোলানো প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল – নট ইন মাই নেম – যেরকমটা যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ সভাগুলিতে বলা হত একটা সময়ে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।