নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কুখরালী এলাকাটি আজ আর আগের মতো নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ আবাসভূমি নয়। এলাকাজুড়ে এখন ছড়িয়ে পড়েছে অন্ধকার এক সংস্কৃতি-মাদক, অনলাইন জুয়া ও অশ্লীলতা। উঠতি বয়সী তরুণদের একটি বড় অংশ নেশার জগতে ঢুকে পড়ছে। রাতভর চায়ের দোকানে চলা গান-বাজনা, ধোঁয়ার কুন্ডলী আর মোবাইল স্ক্রিনে চলা জুয়ার দাপটে কুখরালী যেন হারিয়ে ফেলছে তার সভ্যতা ও সংযমের ইতিহাস।
অপরাধের ঘাঁটি হিসেবে এখন পরিষ্কারভাবে উঠে আসছে কুখরালী আমতলা মোড় এলাকার চায়ের দোকান। চায়ের দোকানে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। বাইরের দৃষ্টিতে এটি একটি সাধারণ চায়ের দোকান হলেও বাস্তবে এটি মাদকসেবী ও জুয়ারীদের ‘অপরাধের গ্যারেজ’। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে রাতভর উচ্চস্বরে হিন্দি গানের তালে তালে চলে অনলাইন জুয়া, মাদকসেবন, এবং নারীদের প্রতি অশালীন আচরণ। আশেপাশের পরিবারগুলো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয় নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও তরুণ প্রজন্ম সবার মুখেই এখন একটাই প্রশ্ন এখনো কেন থামানো যাচ্ছে না এই অনাচার? কেন প্রশাসনের চোখের সামনে এই অপরাধীরা বুক চিতিয়ে চলাফেরা করছে?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মসজিদের ইমাম অভিযোগ করে বলেন, “গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে বসে অনলাইন জুয়া ও মাদকের আসর চলতে পারে না। এটি সামাজিক অবক্ষয়ের স্পষ্ট উদাহরণ। যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।” তিনি আরও জানান, “আমাদের মা-বোনেরা যখন রাস্তা দিয়ে চলেন, তখন অল্পবয়সী কিছু তরুণ উচ্চস্বরে বাজে হিন্দি গান চালিয়ে বাজে ইঙ্গিত দেয়। এমনকি প্রকাশ্যে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেও দ্বিধা করে না। এটা কি আমরা মেনে নিতে পারি?” স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, কুখরালী আমতলা মোড়ে ওপেন উঠতি বয়সী তরুণরা অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। কুখরালী আমতলা মোড়ে চায়ের দোকানে জুয়ার আসক্ত হয়ে পড়েছে, এতে করে যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “রাতের বেলা বাড়ির জানালা বন্ধ করেও শান্তি নেই। বাইরের গানের শব্দ, চিৎকার আর হাসাহাসিতে ঘুম হারাম হয়ে যায়। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?”
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কুখরালীতে আজ যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কিছু কুচক্রী মহলের হাতে। মাদক আর জুয়ার সাথে জড়িত এই ব্যক্তিরা একসময় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় দাপট চালিয়েছিল। এখন আবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।” তিনি আরও বলেন, “যারা একসময় চাঁদাবাজি, জমি দখল, এমনকি বখাটেপনার জন্য পরিচিত ছিল, তারাই এখন রাতের আঁধারে আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে। যদি এখনই প্রশাসন ও সমাজ একসাথে না জাগে, তবে ভবিষ্যৎ আরও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াবে।” স্থানীয় এক নারী বলেন, “আমার মেয়েটা কলেজে পড়ে। গত সপ্তাহে সন্ধ্যায় ফিরছিল, ওকে দেখে কয়েকটা ছেলে উচ্চস্বরে ‘বেবি-বেবি’ বলে চেঁচাতে থাকে। আমরা এখন সন্ধ্যার পর মেয়েদের বাইরে বের হতেই দেই না।” স্থানীয় এক মুদি দোকানদার জানান, “চায়ের দোকানের পাশেই আমার দোকান। আমি রাত ১০টার পর বন্ধ করে দেই। কারণ ওরা এমন ভয়ংকর ভাষায় গালাগালি করে, যেন কেউ বাধা দিলে তার বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে না। বিগত সময়ে আওয়ামীলীগের কিছু পাতি নেতাদের সাথে এদের উঠাবসা ছিল, তারা এখন দেখছি আস্তে আস্তে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শামিনুল হক বলেন, “আমরা কুখরালী এলাকায় মাদক ও জুয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে ছিলো না। তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিব।”
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এসব অপরাধীরা দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। রাতের আঁধারে চায়ের দোকানে মাদক ও জুয়ার পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হচ্ছে কিশোর অপরাধ। অনেকে বলছেন, এদের নিয়ন্ত্রণ করা এখনই জরুরি, নতুবা আগামী দিনে এ এলাকায় ছিনতাই, ইভটিজিং এবং বড় ধরনের অপরাধ প্রবণতা দেখা দিতে পারে।