ফিচার

ডি.বি. ইউনাইটেড হাইস্কুলের ফান্ড থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত: অভিযোগের তীর প্রধান শিক্ষকের দিকে : নিশ্চুপ সভাপতি

By daily satkhira

July 26, 2025

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডি.বি. ইউনাইটেড হাইস্কুলে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। স্কুলের বিভিন্ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনুদানের ব্যয়ের স্বচ্ছতা না থাকায় অভিভাবক, স্থানীয় জনগণ ও শিক্ষক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ বিষয়টি জানার পরও কার্যনির্বাহী কমিটি সভাপতি সম্পূর্ণ নিশ্চুপ, যা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ, বেতন ও পরিক্ষার ফি আদায় করে ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে নিজের কাছে গচ্ছিদ রাখেন। পরবর্তিতে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে আদায়কৃত অর্থ সমন্বয় পূর্বক আত্মসাৎ করেন। সরকারি অনুদানের টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ৬ লক্ষ টাকার একটি এফডিআর কার্যনির্বাহী কমিটি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়ায় নিজের ক্ষমতা বলে তিনি উত্তলন করে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে সমন্বয় করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

শিক্ষকরা আরও জানান, বিদ্যালয়ের সামনে ১০টি দোকান ঘরের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক মোট ১১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অগ্রিম জামানত হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু এই জামানতের টাকা বিদ্যালয়ের কোন ব্যাংক একাউন্টে না জমা দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও বিদ্যলয়ের আম বাগান ইজারা, মেহগনি গাছ বিক্রি, বই-খাতা বিক্রি, দোকান ভাড়া, স্কুল মাঠ ইজারাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে আয়ের টাকা জেনারেল ফান্ডে জমা না করে নিজে আত্মসৎ করেছেন। এবং একই বিল ভাউচার বিভিন্ন খাতে ব্যায় হিসেবে দেখান তিনি। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের স্কুলে অর্থ, আয়-ব্যায়, যাচাই-বাছাই ও নিরীক্ষা কোন কমিটি নেই। প্রধান শিক্ষক একাই নিজের সিদ্ধান্তে আর্থিক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তু এ বিষয়েও কার্যনির্বাহী কমিটি’র সভাপতি কোন দেখভাল করেন না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, ১৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে নতুন অ্যাডহক কমিটি হওয়ার পরে প্রধান শিক্ষক কোন রেজুলেশন ছাড়াই গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখে বিদ্যালয়ের জেনারেল ফান্ড জনতা ব্যাংক ব্রহ্মরাজপুর শাখা হতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উত্তলন করেন এবং ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরকারি টিউশন ফি এর ২ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা অগ্রণী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখা হতে উত্তলন করেন। এছাড়াও অর্ধ বার্ষিক পরিক্ষার পূর্বে ২০২৫ সালের জুন মাসে ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বেতন, পরিক্ষার ফি ও সেশন চার্জ বাবদ আনুমাকি ৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আদায় করলেও বিদ্যালয়ের জেনারেল ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজে পকেটে করে বাড়ি নিয়ে গেছেন। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহিরভূত। কিন্তু নুতন এডহক কমিটি হওয়ার পরে এই সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করলেও সভাপতি এই বিষয়ে কোন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি যা আমাদের জন্য দুঃখ জনক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টের অপারেটর হিসেবে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে টাকা উত্তলন করতে পারবে। কন্তু আমাদের স্কুলের জেনারেল ফান্ড জনতা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অপারেটর হিসেবে ২০২৩ সাল থেকে কমিটির কোন সদস্য না হয়েও তপন কুমার সাহা নামে এক অভিভাবক সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে অবৈধ ভাবে টাকা উত্তলন করে আসছেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরকারি টিউশন ফি’র টাকা সাতক্ষীরা অগ্রণী ব্যাংক থেকে শেখ আব্দুল আহাদ (যিনি বর্তমান কমিটির কোন সদস্য নন) নামে একজনের স্বাক্ষরে টাকা উত্তল করেন প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নীতিমালা লঙ্ঘন।

এই বিস্তর অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে অ্যাডহক কমিটি হওয়ার পরে কোন রেজুলেশন ছাড়া প্রধান শিক্ষক এই লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তলন ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ জেনারেল ফান্ডে জমা না দিয়ে কিভাবে আত্মসাৎ করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মো: নূরুল আমিন লাভলু বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বা আমার স্বাক্ষরে কোন টাকা ওঠেনি। যা হয়েছে পূর্বের কমিটি থাকাকালিন সময়ে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানুষ গড়ার কারিগর, কিন্তু সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি হয় দুর্নীতি, তবে সেটি শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, একটি প্রজন্মের ভবিষ্যতের ওপর সরাসরি আঘাত। তাই দ্রæত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।###