নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কুশখালী গ্রামের তরুণ মো. রাজু (২৬) বিগত ১২ দিন ধরে নিখোঁজ। গত ২৩ জুলাই রাতে একটি মারামারির ঘটনার পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের একমাত্র সন্তান রাজুর খোঁজে পাগলপ্রায় মা-বাবা এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
“আমার ছেলেটা কী মরে গেল?” রাজুর মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, “সেই রাতে বলেছিল—‘মা, একটু ঘুরে আসি’। তারপর আর সে ফেরেনি। আমার বুকের ধনটা কোথায় গেল? আমার রাজুকে ফিরিয়ে দাও— আল্লাহর কাছে এই চাই।”
বাবা আশরাফুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। গলায় ঝাঁঝ নেই, ভাঙা কণ্ঠে বলেন, “ও আমাদের একমাত্র ছেলে সন্তান। কত স্বপ্ন ছিল ওকে নিয়ে! এখন তো শুধু একটা খবরের আশায় রাত-দিন এক করে ফেলেছি। মরে গেলেও যেন একটা খোঁজ পাই।
কী ঘটেছিল সেদিন রাতে? স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, ২৩ জুলাই রাতে রহস্যময় ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ কুশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় মহব্বত, জিল্লু ও তার সঙ্গীরা রাজুকে মারপিট করে। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ। আর সেই রাতেই যেন থমকে যায় আশরাফুলের সংসার।
“এটা নিছক নিখোঁজ না, এর পেছনে রহস্য আছে”—অভিযোগ স্থানীয়দের রাজুর মা সরাসরি অভিযোগ করেন, “যারা মারামারিতে ছিল, তারাই কিছু করেছে। কোন একটা বিষয়ে ওরা রাজুর মুখ চেপে ধরতে চায়। কোথাও লুকিয়ে রেখেছে, হয়তো মেরে ফেলে দিয়েছে…। প্রশাসন কিছু করছে না।”
এলাকাবাসী জানান, রাজু একজন শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। প্রতিবেশী সিরাজুল বলেন, “ওকে কখনও কাউকে কষ্ট দিতে দেখিনি। আমরা সবাই উদ্বিগ্ন।”
পুলিশের বক্তব্য: সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, রাজু মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করত এবং আগে থেকেই ভারতে যাতায়াত করত। আমরা সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছি।”
তিনি আরও জানান, নিখোঁজের আগে রাজু কী পরেছিল, কার সঙ্গে শেষবার দেখা গেছে—এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি: স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, “ছেলেটা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এলাকায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তৎপরতা চালিয়ে তাকে খুঁজে বের করা। পরিবারটি খুব অসহায় অবস্থায় আছে।”
সবকিছুর বিনিময়ে সন্তানকে ফিরে পেতে চান বাবা-মা: বাবা আশরাফুল বলেন, “আমি গরিব মানুষ। জমিজমা বিক্রি করে ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে পড়েছি। সবার দ্বারে যাচ্ছি। কেউ সন্ধান দিতে পারছে না। ওর মাকে সান্তনা দিতে পারছিনা। সবসময় কান্নাকাটি করছে। শুধু আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও।”